হারুন ইবনে শাহাদাত

এ সময় চাষীরা ধান কেটে ঘরে তোলে
এবং ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব শুরু হয়।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এর ভাষায়,
‘এই হেমন্তে কাটা হবে
ধান
আবার শূন্য গোলায় ডাকবে ফসলেরই
বান।’
শুধু কৃষকের শূন্য গোলায় ফসলের বান
ডাকে না। মনেও আসে খুশীর জোয়ার। নতুন ধানের গন্ধের সাথে সাথে নবান্ন উৎসবের পিঠা,পুলি আর মুড়ি-মোয়ার আয়োজনে মৌ মৌ আমেজে ভরে ওঠে গ্রাম-বাংলা। কবিতার ভাষায়,
‘উঠান গেছে ভরে হেম
শোভা ধানে
মন ভাসে খুশীর জোয়ার বানে,
নবান্ন উৎসবে শেষ দুঃখের পালা
আসে সুখ কেটে যায় পেটের জ্বালা।
হিম হিম বাতাসে ভাসে পিঠার ঘ্রাণ
সকালের মিষ্টি রোদে জাগে শত প্রাণ,
কৃষক কাস্তে হাতে মাঠেতে যায় চলে
পা ধুয়ায় তার ভোরের শিশির জলে।
কৃষাণীর হাতে সময় কোথা ব্যস্ত সে সারা বেলা
ধান আর চালের সাথে রাত দিন চলে তার
খেলা,
চালের গুড়োকে দেয় কত শত সাজ
নানান স্বাদের পিঠার চলে কারু কাজ।
হেমন্ত কালের বাংলাদেশের এই সোনালি ছবি
পৃথিবীর আর কোন দেশে বল খুঁজে কারা
পাবি?’
(সূত্র: হেমন্তে বাংলাদেশ, হারুন ইবনে শাহাদাত)
নদী-নালা, খাল-বিলের পানি কমতে থাকে। সেই কম পানিতে গ্রামের কিশোর-কিশোরীরা মেতে ওঠে মাছ
ধরার উৎসবে। বড়রাও দল বেধে জাল নিয়ে নেমে পড়ে বিলর.ঝিল, খাল,নদীর পানিতে। বোয়াল, শোল, রুই.কাতলা মাছ ধরে ঘরে
ফিরে।
ধান কাটা,মাড়াই এবং কৃষকের গোলায় তোলা উপলক্ষে গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন উৎসব।
নবান্ন উৎসব (New Rice Festival) : নবান্ন মানে নতুন অন্ন বা ভাত। নতুন
ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষকরা এই উৎসব পালন করে থাকে। সাধারণত নবান্ন হয় অগ্রহায়ন
মাসে। সে সময় আমন ধান কাটা হয়। এই নতুন ধানের চাল রান্না উপলক্ষে নবান্ন উৎসব হয়ে
থাকে। আগের দিনে কোন কোন অঞ্চলে ফসল কাটার আগে বিজোড় সংখ্যক ধানের ছড়া কেটে নিয়ে
ঘরের চালে বেঁধে রাখা হতো এবং পরে ক্ষেতের বাকী ধান কাটার পর চাল করে নতুন চালের
পায়েশ করে নবান্ন করা হতো। ঐতিহাসিকদের গবেষণা থেকে জানা যায়, কৃষির মতই প্রাচীন এই নবান্ন প্রথা। এই ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গদেশে বারো মাসে
তের পার্বনেরই একটি নবান্ন উৎসব। তবে ১৯৪৭ সালে ইসলামী চেতনার ভিত্তিতে দেশভাগের
পর প্রাচীন পদ্ধতির নবান্ন উৎসব ধীরে ধীরে কদর হারাতে থাকে। তারপরও নিজস্ব
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই উৎসব এখনো হয়। পিঠা-পুলি, মজার মজার খাবার আয়োজন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল আয়োজনের মাধ্যমে।
বাড়ির পাশের ক্ষেতগুলোতে শোভা পায়
হলুদ মটর আর খেসারির ফুল। বাড়ির উঠানে ভোরে শিউলি গাছের নীচে পড়ে থাকে রাতে সুবাস
ছড়ানো শিশির ভেজা সাদা সাদা ফুল। এই ঋতুতে দিনের শেষে তাপমাত্রা খুব বেশী কমে যায়।
ফলে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে থেকেই বিকেলে ঠা-া পড়তে থাকে। ঘাসের ওপর জমে
শিশির; কুয়াশাও দেখা যায়
প্রায়ই। এই সময় একটু অসর্তক না হলেই সর্দি, কাশি, জ্বর প্রভৃতি রোগে
আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। কিশোর-কিশোরী বন্ধুরা,‘ সাবধান বিকেল বেলা এবং খুব ভোরে ঠাণ্ডা লাগাবে না।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন