Powered By Blogger

রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫

তিস্তার পানি না পাওয়ায় বছরে বাংলাদেশের ৩০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি




 
গত ১৮ এপ্রিল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পীস এন্ড প্রসপারিটি সোসাইটির উদ্যোগে সেমিনারের আয়োজন করা হয়
আমাদের পরিবেশ ডেস্ক: তিস্তার পানি না পাওয়ায় বাংলাদেশের প্রতি বছর অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে বলেও মনে করেন তারা। বিশেষজ্ঞরা এও মনে করেন তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ার পেছনে সরকারের যথেষ্ট ব্যর্থতা রয়েছে। কারণ শুধু দ্বি-পক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান হবে না। এই অধিকার ফিরে পেতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘে যাওয়া প্রয়োজন।
গত ১৮ এপ্রিল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত তিস্তা নদী বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এ মত তুলে ধরেন। সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি সোসাইটি এ গোলটেবিলের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার।

জাতিসংঘের সাবেক উপদেষ্টা পানি বিশেষজ্ঞ এস আই খান বলেন, ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর সমস্যার যেমন সমাধান হয়নি, ঠিক তেমনিভাবে তিস্তা নদী সমস্যারও সমাধান হবে না। তাই এ সমাধান পেতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘে যাওয়ার প্রয়োজন। তিস্তা শুকিয়ে যাওয়ায় প্রতিবছর  বাংলাদেশের ৩০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয় বলেও মত দেন এই পানি বিশেষজ্ঞ।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ব জনমত আমাদের পক্ষে। জাতিসংঘের মাধ্যমে সমুদ্রের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। একইভাবে জাতিসংঘই পারে সম্মানের সঙ্গে তিস্তার পানির সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করতে।
তিস্তা সমস্যা সমাধান না হওয়ার পেছনে কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞদের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তিস্তা পানি বণ্টনের বিষয়টি তুলে ধরা যেতে পারে। এতদিন এই সমস্যার সমাধান করতে না পারার পেছনে আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদেরও ব্যর্থতা আছে। তবে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেই জাতিসংঘে তুলে ধরতে হবে।
এসময় বিশিষ্ট রাজনীতিক বিশ্লেষক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দিলারা চৌধুরী বলেন, নদী মরে যাওয়া মানে বাংলাদেশ মরে যাওয়া। তাই এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের গণমাধ্যমকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। তার অভিযোগ সরকার বিষয়টি নিয়ে তেমন কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। কারণ এ সরকার জনগণের সরকার নয়। জনগণের সরকার হলে জনগণের স্বার্থ নিয়ে বেশি চিন্তা করতো। এখন তারা কেবল কিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় সেই চিন্তায় ব্যস্ত। যেদিন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন থেকে তিস্তার পানি নিয়ে সরকার আরও বেশি তৎপরতা দেখাবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, হিমালয়ে উৎপন্ন তিস্তা ভারতের সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গ হয়ে তিন বিঘা করিডোরের কাছ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর ১২৯ কিলোমিটার বাংলাদেশে অবস্থিত। এই নদীর উপত্যকায় প্রায় ২ কোটি মানুষ বসবাস করে। এরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিস্তার পানি চুক্তি করার আগে এবিষয়ে যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত বাংলাদেশের হাতে থাকা প্রয়োজন বলেও মত দেন তিনি।
তিনি বলেন, শুধু মাত্র সীমান্তে পানি ভাগাভাগির চুক্তি করে পানি পাওয়া যাবে না। নদী তার উৎপত্তিস্থল থেকে সমুদ্রে পৌঁছা পর্যন্ত কোথায় কি অবস্থায় আছে তা জানা না গেলে পানি প্রবাহের কোন নিশ্চয়তা থাকবে না। নদী ব্যবস্থাপনাও থাকবে না। গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য দেন- ওয়াটার পার্টনারশিপের সভাপতি  প্রকৌশলী শহীদুল হাসান, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন