চট্টগ্রাম-দোহাজারী সেতু ভেঙে দুর্ঘটনাকবলিত রেল ইঞ্জিন ও তেলের বগি থেকে পড়ে যাওয়া ফার্নেস তেল কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই তেলে পুরো এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়ের। স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবিদরা বলছেন, ছড়িয়ে পড়া তেলে কৃষকের ফসল ও মাছ চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রশাসন বলছে, পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো পরিস্থিতি এখনো ঘটেনি।
গত শুক্রবার চট্টগ্রামের বোয়ালখালী এলাকায় ফার্নেস তেলবাহী
দুটি ওয়াগন সেতু ধসে পড়ে যাওয়া
রেল ইঞ্জিন এখনো উদ্ধার করা যায়নি। সেতু মেরামত না হওয়ায় বন্ধ রয়েছে দোহাজারীর সঙ্গে ট্রেন চলাচল। দুর্ঘটনার ফলে
দুটি ওয়াগনের ৫০ টন জ্বালানি তেল খাল-বিল হয়ে
নদীতে ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের
আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এসব তেল সরানোর কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় তা ছড়িয়ে পড়েছে পাশের কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে। ছড়িয়ে পড়া তেলের দূষণে ফসলি জমি
এলাকার পরিবেশ ও
জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে। এ ছাড়া তেলমিশ্রিত জোয়ারের পানি এলাকার পুকুরগুলোতে প্রবেশ করায় তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে
বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
পরিবেশবিদ ও চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যাপক ইদ্রিস আলী
এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ছড়িয়ে পড়া তেলে এরই মধ্যে পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে। আরো ক্ষতি হতে পারে।
তেলের কারণে স্থানীয় কৃষকদের চাষ করা পাটশাক, ঢেঁড়স, বেগুন সব নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা। এ ছাড়া মারা গেছে পুকুর আর খালের
মাছ।
তবে প্রশাসন বলছে, পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো
পরিস্থিতি হয়নি। তেলগুলো হালকাভাবে পানিতে ভাসছে। টুকটাক একটু ক্ষতি হলেও বিপর্যয়
হবে না।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘তেল আর নতুন করে কালেক্ট
করার মতো অবস্থায় নেই। গাছপালায় যেগুলো পাতায় এবং গাছে লেগে ছিল, ওগুলো লোকজন তুলে ফেলে দিয়েছে। পরিবেশের যতটুকু ক্ষতিকর, এর চেয়ে বেশি
ক্ষতি হবে বলে আমরা
মনে করি না। এখন আমাদের জন্য বেশি জরুরি হলো যে এই ট্রেনলাইনটা চালু করা এবং রেলওয়ের যে ইঞ্জিন এবং যে লরি আছে, সেটা ওঠানো আর
কী।’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান জানান, চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে দুর্ঘটনাকবলিত সেতু মেরামত না
হলে রেল ইঞ্জিন ও তেলের বগি উদ্ধার
করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ চলতেসে, কিন্তু এই যে খারাপ
আবহাওয়া-বৃষ্টির জন্য কাজ একটু বিলম্বিত হচ্ছে। আগামীকালের মধ্যে আমরা রেললাইন পুনঃস্থাপনে সক্ষম হবো। এর পর এই ইঞ্জিন ও
ওয়াগন উদ্ধার অভিযান শুরু করব।
রেললাইন স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত ওয়াগন ওঠানোর জন্য যে রিলিফ ট্রেনলাইনের ওপর দিয়ে আসতে হবে। লাইনটা কালকের মধ্যে ঠিক
হয়ে গেলে পরশু দিন আমরা রিলিফ
ট্রেনটা নিয়ে আসব।’
রেললাইন সচল করতে প্রাকৃতিক বিরূপ আবহাওয়া কিছুটা ছন্দপতন
হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে
কর্তৃপক্ষ। নদী, খাল-বিলে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস তেল
ঘটনাস্থল থেকে ৬০ টাকা কেজি
দরে কিনে নিচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
প্রথম দিন ১০০ কেজি ফার্নেস তেল স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে কেনে যমুনা অয়েল কোম্পানি।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী রেলসেতু ভেঙে খালে পড়ে যাওয়া ট্রেনের ওয়াগন থেকে কর্ণফুলী নদীতে
এবং পরবর্তীতে হালদা নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও
সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সিপিবি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, তেল ছড়িয়ে পড়ায় কর্ণফুলী নদী এবং দেশের একমাত্র মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র
হালদা নদী এখন বিপর্যয়ের মুখে। নদীর পানির অক্সিজেন
কমে গিয়ে এবং বালুকণার সঙ্গে তেল মিশে নানা সংকট সৃষ্টি করবে। এখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ভয়াবহ হুমকির মধ্যে পড়েছে। তেল ছড়িয়ে পড়ায় স্বল্প ও
দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে। নেতৃবৃন্দ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, তেল সরিয়ে দূষণ কমাতে সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। এমন কি সরকার
এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে ক্ষতির আশঙ্কা কমার বদলে কেবল বেড়েই চলেছে। বিবৃতিতে সিপিবির নেতৃবৃন্দ
ক্ষতিগ্রস্ত বোয়ালখালী রেলসেতুটি যথাসময়ে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ না করায় এবং তেল ছড়িয়ে পড়া থামাতে পর্যাপ্ত উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার
জন্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ তেল সরিয়ে দূষণ কমাতে দ্রুতই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন