তোহুর আহমদ
নাম পরিবেশ অধিদফতর। বিশাল অফিস ভবন। যেখানে সিসি ক্যামেরায় ঘেরা কঠোর নিরাপত্তা। বড় কর্তাদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুপরিসর কক্ষ ছাড়াও রয়েছে বিলাসবহুল পাজেরো জিপ। অফিসময় আভিজাত্যের ছাপ। প্রকল্পের ছড়াছড়ি, তাই গাড়িরও অভাব নেই। কিন্তু রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পরিবেশ অধিদফতরে এমন হাইফাই চেহারার সঙ্গে বাস্তবে দেশের পরিবেশগত চেহারার মধ্যে কোনো মিল নেই। যোজন যোজন নয়, বলা যায় আসমান-জমিন তফাৎ। এ উদাহরণের জন্য বেশিদূর যেতে হবে না। পরিবেশ অধিদফতর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে শুধু বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের দিকে তাকালেই অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যাবে। বলা যায়, পরিবেশ অধিদফতরের নাকের ডগায় শত শত শিল্প-কলকারখানা থেকে প্রতিনিয়ত নির্গত হওয়া শিল্পবর্জ্য ও নানা রঙের দূষিত পানি আছড়ে পড়ছে এখানে। ফলে এক সময়ের স্বচ্ছ পানি প্রবাহের বুড়িগঙ্গা এখন আর চেনার উপায় নেই। বুড়িগঙ্গার বুকজুড়ে এখন শুধু কালো আলকাতরার মতো ছপছপ ক্ষত চিহ্ন। কোথাও তা দুর্গন্ধময় রঙিন পানিতেও রূপ নিয়েছে।
এমতাবস্থায় পরিবেশ সচেতন
পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন- বুড়িগঙ্গার চেহারা যদি এ রকম হয় তাহলে সুবিশাল পরিপাটি পরিবেশ অধিদফতর থাকার কোনো প্রয়োজন আছে কি?
এই অধিদফতরের অধীনে পরিবেশ দূষণ রোধে যারা কর্মরত আছেন তাদের চাকরি থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, যারা পরিদর্শক বা তদারকির দায়িত্বে আছেন তারা কি সত্যিই দায়িত্ব পালন করেন, না নিজের আখের গোছাতে শুধু মাসোয়ারা নিতে ব্যস্ত। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে ঢাকার পরিবেশ অধিদফতর পর্যন্ত শক্তিশালী একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। যাদের বাইরের চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই। অনেকে নিজেকে খুব সৎ কর্মকর্তা বলে জাহির করেন। কিন্তু ভেতরের চেহারা সম্পূর্ণ বিপরীত। এ সিন্ডিকেটের সাহায্যকারী ফোর্স হিসেবে কাজ করেন বাইরের কিছু দালাল। পরিবেশ অধিদফতরজুড়ে যাদের আনাগোনা প্রায় দেখা যায়। প্রমাণহীনভাবে এসব দালালদের মাধ্যমে গোপনে রীতিমতো দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। তবে একথাও সত্য, পরিবেশ অধিদফতরের গড়ে সব কর্মকর্তাই এ ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
এই অধিদফতরের অধীনে পরিবেশ দূষণ রোধে যারা কর্মরত আছেন তাদের চাকরি থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, যারা পরিদর্শক বা তদারকির দায়িত্বে আছেন তারা কি সত্যিই দায়িত্ব পালন করেন, না নিজের আখের গোছাতে শুধু মাসোয়ারা নিতে ব্যস্ত। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে ঢাকার পরিবেশ অধিদফতর পর্যন্ত শক্তিশালী একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। যাদের বাইরের চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই। অনেকে নিজেকে খুব সৎ কর্মকর্তা বলে জাহির করেন। কিন্তু ভেতরের চেহারা সম্পূর্ণ বিপরীত। এ সিন্ডিকেটের সাহায্যকারী ফোর্স হিসেবে কাজ করেন বাইরের কিছু দালাল। পরিবেশ অধিদফতরজুড়ে যাদের আনাগোনা প্রায় দেখা যায়। প্রমাণহীনভাবে এসব দালালদের মাধ্যমে গোপনে রীতিমতো দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। তবে একথাও সত্য, পরিবেশ অধিদফতরের গড়ে সব কর্মকর্তাই এ ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মজিবুর
রহমান চৌধুরী নিক্সন যুগান্তরকে বলেন,
পরিবেশ অধিদফতরের অনেক কর্মকর্তার
বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের বিস্তর অভিযোগ আছে। প্রমাণযোগ্য বেশ কিছু
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের সুপারিশও করা হয়েছে। কিন্তু এসব তদন্ত
পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের হাতে থাকায় প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসে না।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের
(পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান যুগান্তরকে বলেন,
পরিবেশ অধিদফতরের অসাধু
কর্মকর্তারা অনেক শিল্প-কারখানা থেকে নিয়মিত মোটা অংকের মাসোয়ারা নেন- এমন
অভিযোগ তাদের কাছে ভুরি ভুরি আসে। কিন্তু হয়রানির ভয়ে অনেকে প্রকাশ্যে এসব
বলার সাহস পান না।
পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক এক
পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন,
সারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পরিবেশ
অধিদফতরের কোনো কোনো কর্মকর্তা
কিভাবে ঘুষ বাণিজ্য করেন তার বিস্তারিত
তথ্য একটি গোয়েন্দা সংস্থা
প্রতিবেদন আকারে সরকারের উচ্চপর্যায়ে
জানিয়েছিল। কিন্তু ওই প্রতিবেদনের ওপর
ভিত্তি করে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল
কিনা তা জানা যায়নি। এক প্রশ্নের
জবাবে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে
তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, অজ্ঞাত কারণে এ
বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে-
বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদীর পানিতে পাওয়া গেছে অ্যামোনিয়া, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম
হাইড্রো অক্সাইড, সালফিউরিক
এসিড,
পটাশিয়াম,
ম্যাঙ্গানিজ, লোহা, তামা, দস্তা, আর্সেনিক, ব্রোমিন, সিসা, নিকেল, স্ট্রংশিয়াম, ক্যাডমিয়াম, রবিডিয়াম, থ্যালিয়াম
ও ক্রোমিয়াম। সরকারি হিসেবে বুড়িগঙ্গার পানিতে প্রতিদিন যে
পরিমাণ দূষিত পদার্থ পড়ছে তার ৬০
শতাংশই শিল্প বর্জ্য। এর ফলে নদীতে
ভয়াবহ দূষণ ঘটেছে।
সরেজমিন নারায়ণগঞ্জ : শুধু
বুড়িগঙ্গা নয়, ঢাকার অদূরে শীতলক্ষ্যার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জেও শিল্প দূষণ ভয়াবহ মাত্রায়
পৌঁছেছে। রোববার সরেজমিন নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা
ঘুরে শিল্প দূষণের ভয়াবহ চিত্র পাওয়া
যায়। দেখা যায়, ছোটখাটো
শিল্প প্রতিষ্ঠান তো বটেই নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় শিল্প
প্রতিষ্ঠানগুলোও পরিবেশ দূষণে পিছিয়ে নেই।
নারায়ণগঞ্জের বড় শিল্প-কারখানাগুলোর
অন্যতম হচ্ছে নিট কনসার্ন লিমিটেড। ৬২ ওয়াটার ওয়ার্কস রোডে বিশাল
এলাকাজুড়ে একাধিক বহুতল ভবনসহ এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। এই প্রতিষ্ঠানের
ডাইংয়ের কাজে ব্যবহৃত পানি ফেলা হচ্ছে কারখানার পেছনের একটি খালে। মাঝিপাড়া
এলাকায় কারখানার ভেতর থেকে গ্যালন গ্যালন রঙিন পানি বেরিয়ে আসছে। তীব্র
দুর্গন্ধযুক্ত এসব পানির কারণে আশপাশের পুরো এলাকা দুর্গন্ধময় হয়ে
উঠেছে।
একই ধরনের অবস্থা দেখা গেল এ
এলাকার অরেকটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ফকির নিটওয়্যার লিমিটেডে গিয়ে। ফকির
নিট ওয়্যার লিমিটেডের দুর্গন্ধযুক্ত কুচকুচে কালো পানি প্রতিষ্ঠানটির সীমানা
প্রাচীর ঘেঁষেই বয়ে যাচ্ছে। দূষিত পানির কারণে এ কারখানার পাশের
রাস্তা দিয়ে মানুষকে নাকে রুমাল চেপে হাঁটতে হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের
তাল্লা রোডে মডেল গ্রুপের কারখানায় গিয়ে অভিনব চিত্র ধরা পড়ে। দেখা যায়, কারখানার
দূষিত পানি ও বর্জ্য ফ্যাক্টরির পাশের একটি গোপন নালা দিয়ে বের করা
হচ্ছে। দিনভর ওই নালা দিয়ে বেরিয়ে আসা দূষিত পানি গিয়ে পড়ছে শীতলক্ষ্যায়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মডেল গ্রুপের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস স্থানীয়দের নেই।
কারণ কারখানার ভেতরে সার্বক্ষণিক ক্যাডার মোতায়েন করে রাখা হয়। কারখানায়
ঢুকে স্থানীয়দের এই অভিযোগের প্রমাণও মিলল। দূষিত পানির বিষয়ে জানার জন্য
কারখানার ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াকিটকি হাতে বেরিয়ে আসেন মনির হোসেন
নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে কোম্পানির এজিএম পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমি মালিক পক্ষের লোক। আমরা লোকাল (স্থানীয়) ছেলে। সাংবাদিকরা
এ কারখানায় এসে দূষণের বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না।’ তিনি
বলেন, ‘এখানকার ইটিপি প্ল্যান্ট ঠিক আছে। এ কারখানা দিয়ে দূষিত পানি
বের হয় না।’ ফতুল্লা থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনির
হোসেন স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী
প্রকৃতির লোক। তিনি বিভিন্ন কারখানার
লাঠিয়াল হিসেবেও কাজ করেন।
এদিকে নিট কনসার্ন
লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার আরিফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তাদের
কারখানায় উন্নত প্রযুক্তির ইটিপি রয়েছে। কারখানার পানি শোধন করেই বাইরে ফেলা হচ্ছে। তাই দূষিত পানি ফেলার অভিযোগ মোটেও সঠিক নয়।
তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদফতর তাদের ইটিপি মাঝে মাঝেই পরীক্ষা করে। এসব
পরীক্ষায় পরিবেশ অধিদফতর সন্তুষ্ট আছে বলে তিনি দাবি
করেন। অপরদিকে দূষিত পানির মাধ্যমে
পরিবেশ দূষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন
ফকির নিটওয়্যার লিমিটেডের
কর্মকর্তারাও। অভিযোগের বিষয়ে জানতে
চাইলে প্রতিষ্ঠানের ইটিপি ইনচার্জ
মকবুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তাদের
কারখানা থেকে দূষিত পানি বের হয় না।
উন্নত প্রযুক্তির ইটিপি প্ল্যান্টের
মাধ্যমে বর্জ্য শোধন করেই পানি বের করা
হচ্ছে। এ কারণে তাদের কারখানার বিরুদ্ধে
পরিবেশ অধিদফতরও কোনো অভিযোগ
তোলেনি।
এসব শিল্প-কারখানার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা দূষণের অভিযোগ অস্বীকার করলেও শীতলক্ষ্যায় ভয়াবহ
দূষণ এক নির্মম বাস্তবতা। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে শীতলক্ষ্যার
পাগলা পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করা পানি আর শোধন করতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। শিল্প
বর্জ্যরে কারণে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার খাল-বিল, পুকুর
এমনকি ফসলি জমিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী বলছেন, এ
ভয়াবহ দূষণ রোধ করতে পরিবেশ অধিদফতরের কাছে বারবার অভিযোগ করেও
কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ঢাকা ওয়াসার প্রধান তথ্য কর্মকর্তা জাকারিয়া
আল মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে শীতলক্ষ্যা থেকে আনা পানিতে
তিনগুণ ক্লোরিন দিয়েও পরিশোধন করা যায় না। পানিতে স্বল্প হলেও দুর্গন্ধ থেকে
যায়।
গোপন সমঝোতা : সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ
ও এর আশপাশের এলাকায় ১২৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিবেশ ছাড়পত্র ও
ইটিপি ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ দূষণকারী হিসেবে
চিহ্নিতও করেছে পরিবেশ অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পরিবেশ
অধিদফতরের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান চলছে। মাঝে-মধ্যে দু-একটিতে লোক দেখানো অভিযান
চালানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। আর এসব শিল্প মালিকরা
ব্যয়বহুল ইটিপি স্থাপন না করে পরিবেশ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের
ম্যানেজ করে ব্যবসা চালানোকেই লাভজনক মনে করেন। এ কারণে
তারা ইটিপিও স্থাপন করেন না।
পানি পরীক্ষায় ভয়াবহ তথ্য
: বুড়িগঙ্গা নদীর চাঁদনিঘাট, সদরঘাট টার্মিনাল, সোয়ারিঘাট, ধোলাইখাল, পাগলা
বাজার ও সিকদার মেডিকেল কলেজ- রাজধানীর ভেতরে এই পাঁচটি পয়েন্ট
ঘুরে ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। দেখা যায়,
এই পাঁচটি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টন বর্জ্য ও বর্জ্যমিশ্রিত পানি নামছে
নদীতে। দিনের আলোতেই এই অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অথচ নির্বিকার পরিবেশ অধিদফতর।
২০১৩ সালের জুন মাস থেকে ’১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এ
পাঁচটি পয়েন্ট থেকে সংগৃহীত পানি পরীক্ষার পর একটি
প্রতিবেদন তৈরি করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন
(পবা)। গত বছর ২১ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি
প্রকাশ করা হয়। এতে ভয়াবহ তথ্য
বেরিয়ে আসে।
জুন মাসে চাঁদনিঘাট পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করা প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন
পাওয়া যায় মাত্র দশমিক ৬ শতাংশ। আর ডিসেম্বরে পাওয়া যায় দশমিক ৭৯ শতাংশ।
একইভাবে জুন মাসে সদরঘাট পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করা পানিতে অক্সিজেন ছিল দশমিক
২৪ শতাংশ। এই পয়েন্টে ডিসেম্বর মাসে সংগৃহীত পানির নমুনায় অক্সিজেন পাওয়া
যায় মাত্র ৩৫ শতাংশ। ধোলাইখাল পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করা পানিতে জুন মাসে
অক্সিজেন ছিল দশমিক ৭৯ শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বরে পাওয়া যায় মাত্র ১২ শতাংশ।
অথচ পানিতে মাছসহ যে কোনো জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য প্রতি লিটার
পানিতে ৫ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রতি লিটারে ৬ মিলিগ্রাম
অক্সিজেন থাকলে সেটিকে সুপেয় পানি বা পানযোগ্য বলে ধরা হয়। প্রাপ্ত
ফলাফলে দেখা যায়, এ পাঁচটি পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করা পানিতে পিএইচ’র (অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য) মাত্রাও ভারসাম্যহীন।
পরিবেশবাদীদের পর্যবেক্ষণ : জাতীয় ও
আন্তর্জাতিক ১৭টি পরিবেশবাদী বেসরকারি সংস্থার পর্যবেক্ষণে বলা
হয়েছে, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ এ তিন নদী আজ বিশ্বের সর্বোচ্চ দূষিত,
দুর্গন্ধময়, অপরিষ্কার
ও হতশ্রী নদীগুলোর অন্যতম।
এ তিন নদীর পানি দিন দিন হয়ে যাচ্ছে
আলকাতরার মতো কালো, ঘন ও আঠালো। এ
পানিতে গোসল করলে চর্মরোগ দেখা দেয়।
পানি পান করার ফলে প্রতি বছর শত শত
মানুষ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত
হচ্ছেন। অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন
অকালে।’
পরিবশেবাদীরা বলছেন, নদ-নদী, খালসহ
বিভিন্ন জলাশয় একের পর এক ধ্বংস
হলেও পরিবেশ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। অথচ
পরিবেশ রক্ষায় তাদেরই কঠোর হাতে আইন
প্রয়োগ করার কথা। তাই এই ধ্বংসলীলার
দায়ভার তারা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক
বলেন, রাইছউল আলম মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের জনবলের সীমাবদ্ধতা প্রকট। সারা দেশে মাত্র ২১টি জেলায় আমাদের
কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছি। তবে এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা
জনসচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছি।’ এক
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শাস্তি দিয়ে নয়,
মানুষকে সচেতন করতে পারলেই পরিবেশ
দূষণ বন্ধ করা সম্ভব। আমরা সেই কাজটিই এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করছি। তিনি
বলেন, দূষণের কারণে ঢাকা ও এর আশপাশের নদ-নদীগুলো এখন মৃতপ্রায় হয়ে যাওয়া একটি বাস্তবতা। কিন্তু এগুলো কারা করছে তা
সবাই জানেন। এসব প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো সামর্থ্য পরিবেশ
অধিদফতরের নেই। তারপরও পরিবেশ অধিদফতর সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যে থেকে দিন-রাত
কাজ করছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা
উন্নতমানের ইটিপি মেশিন স্থাপন করে দেশের আইন-কানুন মেনে শিল্প
প্রতিষ্ঠান চালাতে চান তাদেরও মাঝেমধ্যে বিপাকে পড়তে হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে
বা অন্য কোনো জরুরি পরিস্থিতির কারণে কোনো বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানে স্বল্প
সময়ের জন্য ইটিপি বন্ধ থাকলেই পরিবেশ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ওই সব কারখানার ওপর একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরপর ভিত্তিহীন টেকনিক্যাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে মোটা
অংকের জরিমানা করা হয়। আবার যারা ভিন্ন উপায়ে অগ্রসর হতে সম্মত হন তাদের
জরিমানা মওকুফ কিংবা পরিমাণ কমে যায়।
এ রকম ভুক্তভোগীদের অনেকে
যুগান্তরকে বলেন, অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি নেই। আবার অনেকে ইটিপি
স্থাপন করলেও বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখেন। কেউ কেউ পরিবেশ অধিদফতরের এক শ্রেণীর
অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে বছরের পর বছর ধরে ইটিপি ছাড়াই
দিব্যি বহাল-তবিয়তে শিল্প কারখানা চালু রেখেছেন। অথচ পরিবেশ অধিদফতরের
কর্তাব্যক্তিরা এসব জেনেও না জানার ভান করেন। এর কারণ জানতে চাইলে তারা
বলেন, মাসোয়ারা না পাওয়ার কারণে তারা সারা বছর ক্ষিপ্ত থাকেন। তাই যখন অনিবার্য কারণে কিছু সময়ের জন্য ইটিপি মেশিন
বন্ধ রাখতে হয় তখন সোর্স মারফত খবর নিয়ে তারা নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট নিয়ে
হাজির হন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে
চাইলে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মো.
আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ‘শিল্প মালিকদের কাছ থেকে জরিমানা বা ক্ষতিপূরণ
আদায় করা আমাদের লক্ষ্য নয়। কিন্তু কেউ যখন পরিবেশের ক্ষতি করে তখন সাবধান
করার জন্য তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতেই হয়। পরিবেশ অধিদফতরের
অসাধু কর্মকর্তাদের মাসোয়ারা আদায়ের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, পরিবেশ
অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কারও কাছ থেকে মাসোয়ারা নিলে ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানের উচিত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ
করা।
দূষণকারীদের তালিকা : পরিবেশ
অধিদফতরেরই তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হল-
আড়াইহাজার এলাকার নিউ আলম ডাইং, হাজী আক্তার ডাইং, ফারজানা
টেক্সটাইল অ্যান্ড প্রিন্টিং প্রসেসিং,
রানকা সোহেল কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস,
সালাউদ্দীন আহম্মদ টেক্সটাইল, সানমুন
টেক্সটাইল, মায়ের
দোয়া ডাইং, এমআর
ডাইং, হৃদয় ডাইং, ঐশী ডাইং,
এআর ডাইং,
সুমি প্রিন্টিং অ্যান্ড উইভিং
ইন্ডাস্ট্রিজ ও অনি ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং। ফতুল্লা এলাকার দূষণকারী শিল্প-কারখানাগুলো হল,
প্রাইম নিট ডাইং, শাওনা
ডাইং, রহমান নিটিং
অ্যান্ড ইয়ার্ন প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ, রহমান
হোসিয়ারি ডাইং অ্যান্ড
ফিনিশিং মিলস, নিউ
মাস্টার ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস,
এনকে নিটওয়্যার, নিউ এমএম ডাইং, আজাদ নিট কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস, নিউ
চাঁদ ডাইং অ্যান্ড প্রসেসিং,
হোসেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট, মুন
নিটওয়্যার অ্যান্ড কম্পোজিট, আমিন ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং, ওয়েস্ট
নিটওয়্যার, আমজাদ ডাইং, বিআর এন্টারপ্রাইজ, কালার
ফেয়ার গার্মেন্টস ওয়াশিং, চাঁদ ডাইং অ্যান্ড প্রসেসিং,
জিএম ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং
ওয়ার্কস, রুমা ফেব্রিক্স,
সাহিল ফ্যশানস, শাহ
আলম ট্রেডার্স, রকি টেক্সটাইল, নূর
ডাইং অ্যান্ড গার্মেন্ট, কদম রসুল ডাইং,
ঢাকা টেক্সটাইল মিলস, হাজী
প্রিন্টিং, রূপনগর ডাইং, বোম্বে ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং, বোম্বে ফেব্রিক্স, কাজী
ওয়াশিং প্লান্ট, তাজ ডাইং, হাজী আলী ডাইং, মিশওয়্যার
ডাইং অ্যান্ড নিটওয়্যার, ম্যাকবেথ ডাইং,
সুমন ডাইং, ওসমান নিটেক্স, আইএফএস টেক্সটাইল, জনি
টেক্সটাইল মিলস, সানলাইট ডাইং, মুজাহিদ কালার টেক, কোয়ালিটি
টেক্সটাইল, গোল্ডেন ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ,
ইমন প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ, ইম্পেরিয়াল
ডাইং, আমানা নিটেক্স,
প্রত্যায় অ্যাপারেলস, রেডিকেল
ডিজাইল, মহিউদ্দীন টেক্সটাইল,
উজ্জল ডাইং, স্টার
ডাইং ফেব্রিক্স, লোকনাথ ডাইং, বাংলাদেশ ডাইং অ্যান্ড প্রসেসিং, সুমনা
ডাইং অ্যান্ড ওয়াশ, সোহেল ডাইং, বিএল ডাইং, ন্যাশনাল
টেক্সটাইল অ্যান্ড প্রসেসিং, এশিয়ান ফেব্রিক্স মিলস, এসবি
ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং, এনএ ডাইং মিলস,
নূর সুইং অ্যান্ড ডাইং, সোনালী
ডাইং অ্যান্ড প্রসেসিং, এএল লন্ড্রি, আকবর ডাইং, হাসান
ডাইং, মেসার্স চাঁদ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, মাদার
কালার, নিউ
ওরিয়েন্ট ডাইং, প্রোগ্রেসিভ
ডাইং অ্যান্ড প্রসেসিং, রহমানীয় শাড়ি ছাপাখানা,
মমতাজ ডাইং অ্যান্ড প্রসেসিং, পারভেজ
ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, এসেন্সিয়াল
নিটওয়্যার, নিট
ওয়ার্ল্ড, এমএস নিট কম্পোজিট,
মদিনা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং ও রূপসী গ্রুপ। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার কারখানাগুলো হল- বয়েজার
ডাইং, শাকিল
নিটেক্স,
সীমা নিটওয়্যার ডাইং, জাগরণ
টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, অ্যাংকর ডাইং
অ্যান্ড এক্সেসরিজ, মিম
থ্রেড ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইউনিক ইয়ার্ন
ডাইং। কাঁচপুরের শিল্পগুলো
হচ্ছে- মেসার্স হাবিব ডাইং, নিকি ডাইং মিলস,
পলি ফেব্রিক্স, অনন্ত
ডেনিম টেকনো লিমিটেড, ভীবজিউর কম্পোজিট,
রাজ ফ্যাশন ও মার্কারি প্রিন্টিং।
এছাড়া ৩২ ইশাখাঁ রোডের প্রাইম ওয়াশিং,
রূপগঞ্জের অনিক কম্পোজিট, লিন্ডে
বাংলাদেশ, অন্তিম নিট কম্পোজিট,
জয়া গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রিজ, ঝলমল
টেক্সটাইল, শাহারিস কেটি লিমিটেড,
থ্রি স্টার ডাইং, নিউ
সম্রাট ডাইং, গৌরি ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস,
মিতা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং মিলস, লিনা পেপার মিলস ও ভি নিটওয়্যার অ্যান্ড কম্পোজিশন। সোনারগাঁয়ের
মাগুরা পেপার মিলস ও বন্দর এলাকার গাজীপুর বোর্ড মিলস। (সূত্র: যুগান্তর)
ভয়াবহ দূষণ ও দুর্নীতির গ্রাসে নদী খাল জলাশয়
তোহুর আহমদ
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল, ২০১৫

নাম
পরিবেশ অধিদফতর। বিশাল অফিস ভবন। যেখানে সিসি ক্যামেরায় ঘেরা কঠোর
নিরাপত্তা। বড় কর্তাদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুপরিসর কক্ষ ছাড়াও রয়েছে
বিলাসবহুল পাজেরো জিপ। অফিসময় আভিজাত্যের ছাপ। প্রকল্পের ছড়াছড়ি, তাই
গাড়িরও অভাব নেই। কিন্তু রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পরিবেশ অধিদফতরে এমন
হাইফাই চেহারার সঙ্গে বাস্তবে দেশের পরিবেশগত চেহারার মধ্যে কোনো মিল নেই।
যোজন যোজন নয়, বলা যায় আসমান-জমিন তফাৎ। এ উদাহরণের জন্য বেশিদূর যেতে হবে
না। পরিবেশ অধিদফতর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে শুধু বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের
দিকে তাকালেই অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যাবে। বলা যায়, পরিবেশ অধিদফতরের নাকের
ডগায় শত শত শিল্প-কলকারখানা থেকে প্রতিনিয়ত নির্গত হওয়া শিল্পবর্জ্য ও নানা
রঙের দূষিত পানি আছড়ে পড়ছে এখানে। ফলে এক সময়ের স্বচ্ছ পানি প্রবাহের
বুড়িগঙ্গা এখন আর চেনার উপায় নেই। বুড়িগঙ্গার বুকজুড়ে এখন শুধু কালো
আলকাতরার মতো ছপছপ ক্ষত চিহ্ন। কোথাও তা দুর্গন্ধময় রঙিন পানিতেও রূপ
নিয়েছে।
এমতাবস্থায়
পরিবেশ সচেতন পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন- বুড়িগঙ্গার চেহারা যদি এ রকম হয় তাহলে
সুবিশাল পরিপাটি পরিবেশ অধিদফতর থাকার কোনো প্রয়োজন আছে কি? এই অধিদফতরের
অধীনে পরিবেশ দূষণ রোধে যারা কর্মরত আছেন তাদের চাকরি থাকা নিয়েও প্রশ্ন
তোলা যায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, যারা পরিদর্শক বা তদারকির
দায়িত্বে আছেন তারা কি সত্যিই দায়িত্ব পালন করেন, না নিজের আখের গোছাতে
শুধু মাসোয়ারা নিতে ব্যস্ত। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, মাঠ পর্যায় থেকে
শুরু করে ঢাকার পরিবেশ অধিদফতর পর্যন্ত শক্তিশালী একটি দুর্নীতিবাজ
সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। যাদের বাইরের চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই। অনেকে
নিজেকে খুব সৎ কর্মকর্তা বলে জাহির করেন। কিন্তু ভেতরের চেহারা সম্পূর্ণ
বিপরীত। এ সিন্ডিকেটের সাহায্যকারী ফোর্স হিসেবে কাজ করেন বাইরের কিছু
দালাল। পরিবেশ অধিদফতরজুড়ে যাদের আনাগোনা প্রায় দেখা যায়। প্রমাণহীনভাবে
এসব দালালদের মাধ্যমে গোপনে রীতিমতো দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। তবে একথাও
সত্য, পরিবেশ অধিদফতরের গড়ে সব কর্মকর্তাই এ ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত
নন।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বন ও
পরিবেশ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান
চৌধুরী নিক্সন যুগান্তরকে বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে
ঘুষ গ্রহণের বিস্তর অভিযোগ আছে। প্রমাণযোগ্য বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট
অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের সুপারিশও করা হয়েছে। কিন্তু এসব তদন্ত পরিবেশ
অধিদফতরের কর্মকর্তাদের হাতে থাকায় প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসে না।পরিবেশ
বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান যুগান্তরকে বলেন, পরিবেশ
অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তারা অনেক শিল্প-কারখানা থেকে নিয়মিত মোটা অংকের
মাসোয়ারা নেন- এমন অভিযোগ তাদের কাছে ভুরি ভুরি আসে। কিন্তু হয়রানির ভয়ে
অনেকে প্রকাশ্যে এসব বলার সাহস পান না।পরিবেশ
অধিদফতরের সাবেক এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন,
সারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পরিবেশ অধিদফতরের কোনো কোনো কর্মকর্তা
কিভাবে ঘুষ বাণিজ্য করেন তার বিস্তারিত তথ্য একটি গোয়েন্দা সংস্থা
প্রতিবেদন আকারে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানিয়েছিল। কিন্তু ওই প্রতিবেদনের ওপর
ভিত্তি করে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি। এক প্রশ্নের
জবাবে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, অজ্ঞাত কারণে এ
বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।পরিবেশবাদী
সংগঠনগুলো বলছে- বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদীর পানিতে পাওয়া গেছে
অ্যামোনিয়া, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম হাইড্রো অক্সাইড, সালফিউরিক
এসিড, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, লোহা, তামা, দস্তা, আর্সেনিক, ব্রোমিন, সিসা,
নিকেল, স্ট্রংশিয়াম, ক্যাডমিয়াম, রবিডিয়াম, থ্যালিয়াম ও ক্রোমিয়াম। সরকারি
হিসেবে বুড়িগঙ্গার পানিতে প্রতিদিন যে পরিমাণ দূষিত পদার্থ পড়ছে তার ৬০
শতাংশই শিল্প বর্জ্য। এর ফলে নদীতে ভয়াবহ দূষণ ঘটেছে।সরেজমিন
নারায়ণগঞ্জ : শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, ঢাকার অদূরে শীতলক্ষ্যার তীর ঘেঁষে গড়ে
ওঠা শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জেও শিল্প দূষণ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। রোববার
সরেজমিন নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শিল্প দূষণের ভয়াবহ চিত্র পাওয়া
যায়। দেখা যায়, ছোটখাটো শিল্প প্রতিষ্ঠান তো বটেই নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড়
শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও পরিবেশ দূষণে পিছিয়ে নেই।নারায়ণগঞ্জের
বড় শিল্প-কারখানাগুলোর অন্যতম হচ্ছে নিট কনসার্ন লিমিটেড। ৬২ ওয়াটার
ওয়ার্কস রোডে বিশাল এলাকাজুড়ে একাধিক বহুতল ভবনসহ এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থান।
এই প্রতিষ্ঠানের ডাইংয়ের কাজে ব্যবহৃত পানি ফেলা হচ্ছে কারখানার পেছনের
একটি খালে। মাঝিপাড়া এলাকায় কারখানার ভেতর থেকে গ্যালন গ্যালন রঙিন পানি
বেরিয়ে আসছে। তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত এসব পানির কারণে আশপাশের পুরো এলাকা
দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে।একই ধরনের
অবস্থা দেখা গেল এ এলাকার অরেকটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ফকির নিটওয়্যার
লিমিটেডে গিয়ে। ফকির নিট ওয়্যার লিমিটেডের দুর্গন্ধযুক্ত কুচকুচে কালো পানি
প্রতিষ্ঠানটির সীমানা প্রাচীর ঘেঁষেই বয়ে যাচ্ছে। দূষিত পানির কারণে এ
কারখানার পাশের রাস্তা দিয়ে মানুষকে নাকে রুমাল চেপে হাঁটতে হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের তাল্লা রোডে মডেল গ্রুপের কারখানায় গিয়ে অভিনব চিত্র ধরা
পড়ে। দেখা যায়, কারখানার দূষিত পানি ও বর্জ্য ফ্যাক্টরির পাশের একটি গোপন
নালা দিয়ে বের করা হচ্ছে। দিনভর ওই নালা দিয়ে বেরিয়ে আসা দূষিত পানি গিয়ে
পড়ছে শীতলক্ষ্যায়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মডেল গ্রুপের বিরুদ্ধে কথা বলার
সাহস স্থানীয়দের নেই। কারণ কারখানার ভেতরে সার্বক্ষণিক ক্যাডার মোতায়েন করে
রাখা হয়। কারখানায় ঢুকে স্থানীয়দের এই অভিযোগের প্রমাণও মিলল। দূষিত পানির
বিষয়ে জানার জন্য কারখানার ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াকিটকি হাতে বেরিয়ে
আসেন মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে কোম্পানির এজিএম পরিচয় দিয়ে
বলেন, ‘আমি মালিক পক্ষের লোক। আমরা লোকাল (স্থানীয়) ছেলে। সাংবাদিকরা এ
কারখানায় এসে দূষণের বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না।’ তিনি বলেন,
‘এখানকার ইটিপি প্ল্যান্ট ঠিক আছে। এ কারখানা দিয়ে দূষিত পানি বের হয় না।’
ফতুল্লা থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনির হোসেন স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী
প্রকৃতির লোক। তিনি বিভিন্ন কারখানার লাঠিয়াল হিসেবেও কাজ করেন।এদিকে
নিট কনসার্ন লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার আরিফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন,
তাদের কারখানায় উন্নত প্রযুক্তির ইটিপি রয়েছে। কারখানার পানি শোধন করেই
বাইরে ফেলা হচ্ছে। তাই দূষিত পানি ফেলার অভিযোগ মোটেও সঠিক নয়। তিনি বলেন,
পরিবেশ অধিদফতর তাদের ইটিপি মাঝে মাঝেই পরীক্ষা করে। এসব পরীক্ষায় পরিবেশ
অধিদফতর সন্তুষ্ট আছে বলে তিনি দাবি করেন। অপরদিকে দূষিত পানির মাধ্যমে
পরিবেশ দূষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন ফকির নিটওয়্যার লিমিটেডের
কর্মকর্তারাও। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের ইটিপি ইনচার্জ
মকবুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তাদের কারখানা থেকে দূষিত পানি বের হয় না।
উন্নত প্রযুক্তির ইটিপি প্ল্যান্টের মাধ্যমে বর্জ্য শোধন করেই পানি বের করা
হচ্ছে। এ কারণে তাদের কারখানার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদফতরও কোনো অভিযোগ
তোলেনি।এসব শিল্প-কারখানার সঙ্গে
সংশ্লিষ্টরা দূষণের অভিযোগ অস্বীকার করলেও শীতলক্ষ্যায় ভয়াবহ দূষণ এক
নির্মম বাস্তবতা। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে শীতলক্ষ্যার পাগলা পয়েন্ট
থেকে সংগ্রহ করা পানি আর শোধন করতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। শিল্প বর্জ্যরে
কারণে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার খাল-বিল, পুকুর এমনকি ফসলি জমিও নষ্ট
হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী বলছেন, এ ভয়াবহ দূষণ রোধ করতে পরিবেশ অধিদফতরের কাছে
বারবার অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ঢাকা ওয়াসার প্রধান তথ্য
কর্মকর্তা জাকারিয়া আল মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে শীতলক্ষ্যা
থেকে আনা পানিতে তিনগুণ ক্লোরিন দিয়েও পরিশোধন করা যায় না। পানিতে স্বল্প
হলেও দুর্গন্ধ থেকে যায়।গোপন সমঝোতা :
সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ ও এর আশপাশের এলাকায় ১২৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান
পরিবেশ ছাড়পত্র ও ইটিপি ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ
দূষণকারী হিসেবে চিহ্নিতও করেছে পরিবেশ অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে,
পরিবেশ অধিদফতরের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে
এসব প্রতিষ্ঠান চলছে। মাঝে-মধ্যে দু-একটিতে লোক দেখানো অভিযান চালানো হলেও
কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। আর এসব শিল্প মালিকরা ব্যয়বহুল ইটিপি
স্থাপন না করে পরিবেশ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ব্যবসা
চালানোকেই লাভজনক মনে করেন। এ কারণে তারা ইটিপিও স্থাপন করেন না।পানি
পরীক্ষায় ভয়াবহ তথ্য : বুড়িগঙ্গা নদীর চাঁদনিঘাট, সদরঘাট টার্মিনাল,
সোয়ারিঘাট, ধোলাইখাল, পাগলা বাজার ও সিকদার মেডিকেল কলেজ- রাজধানীর ভেতরে
এই পাঁচটি পয়েন্ট ঘুরে ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। দেখা যায়, এই পাঁচটি পয়েন্ট
দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টন বর্জ্য ও বর্জ্যমিশ্রিত পানি নামছে নদীতে। দিনের
আলোতেই এই অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অথচ নির্বিকার পরিবেশ অধিদফতর। ২০১৩ সালের
জুন মাস থেকে ’১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এ পাঁচটি পয়েন্ট থেকে
সংগৃহীত পানি পরীক্ষার পর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন
(পবা)। গত বছর ২১ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে ভয়াবহ তথ্য
বেরিয়ে আসে।জুন মাসে চাঁদনিঘাট
পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করা প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন পাওয়া যায়
মাত্র দশমিক ৬ শতাংশ। আর ডিসেম্বরে পাওয়া যায় দশমিক ৭৯ শতাংশ। একইভাবে জুন
মাসে সদরঘাট পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করা পানিতে অক্সিজেন ছিল দশমিক ২৪ শতাংশ।
এই পয়েন্টে ডিসেম্বর মাসে সংগৃহীত পানির নমুনায় অক্সিজেন পাওয়া যায় মাত্র
৩৫ শতাংশ। ধোলাইখাল পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করা পানিতে জুন মাসে অক্সিজেন ছিল
দশমিক ৭৯ শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বরে পাওয়া যায় মাত্র ১২ শতাংশ। অথচ পানিতে
মাছসহ যে কোনো জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য প্রতি লিটার পানিতে ৫
মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রতি লিটারে ৬ মিলিগ্রাম অক্সিজেন
থাকলে সেটিকে সুপেয় পানি বা পানযোগ্য বলে ধরা হয়। প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়,
এ পাঁচটি পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করা পানিতে পিএইচ’র (অম্ল ও ক্ষারের
ভারসাম্য) মাত্রাও ভারসাম্যহীন।পরিবেশবাদীদের
পর্যবেক্ষণ : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ১৭টি পরিবেশবাদী বেসরকারি সংস্থার
পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ এ তিন নদী আজ
বিশ্বের সর্বোচ্চ দূষিত, দুর্গন্ধময়, অপরিষ্কার ও হতশ্রী নদীগুলোর অন্যতম।
এ তিন নদীর পানি দিন দিন হয়ে যাচ্ছে আলকাতরার মতো কালো, ঘন ও আঠালো। এ
পানিতে গোসল করলে চর্মরোগ দেখা দেয়। পানি পান করার ফলে প্রতি বছর শত শত
মানুষ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন
অকালে।’ পরিবশেবাদীরা বলছেন, নদ-নদী, খালসহ বিভিন্ন জলাশয় একের পর এক ধ্বংস
হলেও পরিবেশ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। অথচ
পরিবেশ রক্ষায় তাদেরই কঠোর হাতে আইন প্রয়োগ করার কথা। তাই এই ধ্বংসলীলার
দায়ভার তারা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।পরিবেশ
অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, রাইছউল আলম মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের
জনবলের সীমাবদ্ধতা প্রকট। সারা দেশে মাত্র ২১টি জেলায় আমাদের কর্মকাণ্ড
পরিচালনা করতে পারছি। তবে এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা জনসচেতনতা তৈরির
চেষ্টা করছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শাস্তি দিয়ে নয়, মানুষকে সচেতন
করতে পারলেই পরিবেশ দূষণ বন্ধ করা সম্ভব। আমরা সেই কাজটিই এখন অগ্রাধিকার
ভিত্তিতে করছি। তিনি বলেন, দূষণের কারণে ঢাকা ও এর আশপাশের নদ-নদীগুলো এখন
মৃতপ্রায় হয়ে যাওয়া একটি বাস্তবতা। কিন্তু এগুলো কারা করছে তা সবাই জানেন।
এসব প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো সামর্থ্য পরিবেশ অধিদফতরের নেই।
তারপরও পরিবেশ অধিদফতর সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যে থেকে দিন-রাত কাজ করছে।এদিকে
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা উন্নতমানের ইটিপি মেশিন স্থাপন করে দেশের
আইন-কানুন মেনে শিল্প প্রতিষ্ঠান চালাতে চান তাদেরও মাঝেমধ্যে বিপাকে পড়তে
হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে বা অন্য কোনো জরুরি পরিস্থিতির কারণে কোনো বৃহৎ শিল্প
প্রতিষ্ঠানে স্বল্প সময়ের জন্য ইটিপি বন্ধ থাকলেই পরিবেশ অধিদফতরের
সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ওই সব কারখানার ওপর একযোগে ঝাঁপিয়ে
পড়েন। এরপর ভিত্তিহীন টেকনিক্যাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে মোটা অংকের জরিমানা
করা হয়। আবার যারা ভিন্ন উপায়ে অগ্রসর হতে সম্মত হন তাদের জরিমানা মওকুফ
কিংবা পরিমাণ কমে যায়।এ রকম
ভুক্তভোগীদের অনেকে যুগান্তরকে বলেন, অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি নেই।
আবার অনেকে ইটিপি স্থাপন করলেও বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখেন। কেউ কেউ পরিবেশ
অধিদফতরের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে বছরের পর বছর
ধরে ইটিপি ছাড়াই দিব্যি বহাল-তবিয়তে শিল্প কারখানা চালু রেখেছেন। অথচ
পরিবেশ অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিরা এসব জেনেও না জানার ভান করেন। এর কারণ
জানতে চাইলে তারা বলেন, মাসোয়ারা না পাওয়ার কারণে তারা সারা বছর ক্ষিপ্ত
থাকেন। তাই যখন অনিবার্য কারণে কিছু সময়ের জন্য ইটিপি মেশিন বন্ধ রাখতে হয়
তখন সোর্স মারফত খবর নিয়ে তারা নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট নিয়ে হাজির হন।এসব
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড
এনফোর্সমেন্ট) মো. আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ‘শিল্প মালিকদের কাছ থেকে
জরিমানা বা ক্ষতিপূরণ আদায় করা আমাদের লক্ষ্য নয়। কিন্তু কেউ যখন পরিবেশের
ক্ষতি করে তখন সাবধান করার জন্য তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতেই হয়।
পরিবেশ অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তাদের মাসোয়ারা আদায়ের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি
বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কারও কাছ থেকে মাসোয়ারা
নিলে ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানের উচিত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা।দূষণকারীদের
তালিকা : পরিবেশ অধিদফতরেরই তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী দূষণকারী
প্রতিষ্ঠানগুলো হল- আড়াইহাজার এলাকার নিউ আলম ডাইং, হাজী আক্তার ডাইং,
ফারজানা টেক্সটাইল অ্যান্ড প্রিন্টিং প্রসেসিং, রানকা সোহেল কম্পোজিট
টেক্সটাইল মিলস, সালাউদ্দীন আহম্মদ টেক্সটাইল, সানমুন টেক্সটাইল, মায়ের
দোয়া ডাইং, এমআর ডাইং, হৃদয় ডাইং, ঐশী ডাইং, এআর ডাইং, সুমি প্রিন্টিং
অ্যান্ড উইভিং ইন্ডাস্ট্রিজ ও অনি ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং। ফতুল্লা এলাকার
দূষণকারী শিল্প-কারখানাগুলো হল, প্রাইম নিট ডাইং, শাওনা ডাইং, রহমান নিটিং
অ্যান্ড ইয়ার্ন প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ, রহমান হোসিয়ারি ডাইং অ্যান্ড
ফিনিশিং মিলস, নিউ মাস্টার ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, এনকে নিটওয়্যার, নিউ
এমএম ডাইং, আজাদ নিট কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস, নিউ চাঁদ ডাইং অ্যান্ড
প্রসেসিং, হোসেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট, মুন নিটওয়্যার অ্যান্ড কম্পোজিট, আমিন
ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং, ওয়েস্ট নিটওয়্যার, আমজাদ ডাইং, বিআর এন্টারপ্রাইজ,
কালার ফেয়ার গার্মেন্টস ওয়াশিং, চাঁদ ডাইং অ্যান্ড প্রসেসিং, জিএম ডাইং
অ্যান্ড প্রিন্টিং ওয়ার্কস, রুমা ফেব্রিক্স, সাহিল ফ্যশানস, শাহ আলম
ট্রেডার্স, রকি টেক্সটাইল, নূর ডাইং অ্যান্ড গার্মেন্ট, কদম রসুল ডাইং,
ঢাকা টেক্সটাইল মিলস, হাজী প্রিন্টিং, রূপনগর ডাইং, বোম্বে ডাইং অ্যান্ড
ফিনিশিং, বোম্বে ফেব্রিক্স, কাজী ওয়াশিং প্লান্ট, তাজ ডাইং, হাজী আলী ডাইং,
মিশওয়্যার ডাইং অ্যান্ড নিটওয়্যার, ম্যাকবেথ ডাইং, সুমন ডাইং, ওসমান
নিটেক্স, আইএফএস টেক্সটাইল, জনি টেক্সটাইল মিলস, সানলাইট ডাইং, মুজাহিদ
কালার টেক, কোয়ালিটি টেক্সটাইল, গোল্ডেন ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, ইমন প্রিন্টিং
ইন্ডাস্ট্রিজ, ইম্পেরিয়াল ডাইং, আমানা নিটেক্স, প্রত্যায় অ্যাপারেলস,
রেডিকেল ডিজাইল, মহিউদ্দীন টেক্সটাইল, উজ্জল ডাইং, স্টার ডাইং ফেব্রিক্স,
লোকনাথ ডাইং, বাংলাদেশ ডাইং অ্যান্ড প্রসেসিং, সুমনা ডাইং অ্যান্ড ওয়াশ,
সোহেল ডাইং, বিএল ডাইং, ন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড প্রসেসিং, এশিয়ান
ফেব্রিক্স মিলস, এসবি ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং, এনএ ডাইং মিলস, নূর সুইং
অ্যান্ড ডাইং, সোনালী ডাইং অ্যান্ড প্রসেসিং, এএল লন্ড্রি, আকবর ডাইং,
হাসান ডাইং, মেসার্স চাঁদ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, মাদার কালার, নিউ
ওরিয়েন্ট ডাইং, প্রোগ্রেসিভ ডাইং অ্যান্ড প্রসেসিং, রহমানীয় শাড়ি ছাপাখানা,
মমতাজ ডাইং অ্যান্ড প্রসেসিং, পারভেজ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, এসেন্সিয়াল
নিটওয়্যার, নিট ওয়ার্ল্ড, এমএস নিট কম্পোজিট, মদিনা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং
ও রূপসী গ্রুপ। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার কারখানাগুলো হল- বয়েজার ডাইং, শাকিল
নিটেক্স, সীমা নিটওয়্যার ডাইং, জাগরণ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, অ্যাংকর ডাইং
অ্যান্ড এক্সেসরিজ, মিম থ্রেড ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইউনিক ইয়ার্ন ডাইং।
কাঁচপুরের শিল্পগুলো হচ্ছে- মেসার্স হাবিব ডাইং, নিকি ডাইং মিলস, পলি
ফেব্রিক্স, অনন্ত ডেনিম টেকনো লিমিটেড, ভীবজিউর কম্পোজিট, রাজ ফ্যাশন ও
মার্কারি প্রিন্টিং। এছাড়া ৩২ ইশাখাঁ রোডের প্রাইম ওয়াশিং, রূপগঞ্জের অনিক
কম্পোজিট, লিন্ডে বাংলাদেশ, অন্তিম নিট কম্পোজিট, জয়া গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রিজ,
ঝলমল টেক্সটাইল, শাহারিস কেটি লিমিটেড, থ্রি স্টার ডাইং, নিউ সম্রাট ডাইং,
গৌরি ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, মিতা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং মিলস, লিনা
পেপার মিলস ও ভি নিটওয়্যার অ্যান্ড কম্পোজিশন। সোনারগাঁয়ের মাগুরা পেপার
মিলস ও বন্দর এলাকার গাজীপুর বোর্ড মিলস।
<a
href='http://platinum.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=acd94d5f'
target='_blank'><img
src='http://platinum.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/avw.php?zoneid=780&amp;n=acd94d5f'
border='0' alt='' /></a>

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন