Powered By Blogger

সোমবার, ১১ মে, ২০১৫

শিশুর বিকাশে চাই সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ





আামদের পরিবেশ ডেস্ক: কবি গোলাম মোস্তফার কবিতার ভাষায়,"ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে"আজ যে শিশু, আগামী দিনে সেই হবে শিশুর পিতা, সেই জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে উন্নতির দিকে। কিন্তু তার জন্য চাই সুন্দর পরিবেশ।
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ও তার ক্রমবিকাশ সুষ্ঠুভাবে হওয়া খুবই জরুরি। শিশুর বেড়ে ওঠা ও তার মানসিকতার উৎকর্ষতা নিয়ে অভিভাবকদের সব সময়ই চিন্তা করা দরকার। আমাদের চারপাশে কত শিশু বেড়ে উঠছে, তাদের কতটা মানসিক বিকাশ ঘটছে সে ব্যাপারে পুংখানুপুংখভাবে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে যে, একটি শিশু তার যোগ্য পরিবেশ পাচ্ছে কিনা।
 কিন্তু সেদিকে অনেকের খেয়াল থাকে না। পরিবারের সদস্যদের দেখা যায়, শিশুদের তারা সব সময়ই এমনভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখেন তা শিশুদের জন্য অনুকূলে নয়। এতে শিশুরা সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠে না। তখন সমাজ ও পরিবারের প্রতি তার নেতিবাচক ধারণা জন্মে।নিম্নবিত্ত পরিবারের নারী রাবেয়া বেগম। তার দুটি সন্তান। একজনের বয়স তিন, অন্যজনের বয়স পাঁচ। স্বামী বিয়ে করে চলে গেছে অন্য জায়গায় এক বছর আগে।অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতে হয়। একদিন সকালে খাবার শূন্য ঘরে তিন বছরের সন্তান যখন কান্না শুরু করলে তখন রাবেয়া বেগম প্রথমে তাকে সান্ত্বনা দেয়। এ প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থ হয় তখন তিনি জোরে চড় বসিয়ে দেন ছেলের গালে। এরপর বড় সন্তানের কাছে শিশুটিকে রেখে রাবেয়া দ্রুত চলে যান পাশের বাড়িতে। সেখানে কাজ করে রাবেয়া কিছু খাবার জোগায়। শিশুটির ক্ষুধা নিবৃত্ত হয়। উল্লেখ্য যে, শিশুর ক্ষুধা নিবৃত্ত করা নিত্যদিনের পাঁচালী হলেও এদের মানসিক স্বাস্থ্যের বৃদ্ধি কোনোভাবেই ঘটে না। এ গেল গরিব পরিবারের শিশুর কথা।

 মধ্যবিত্ত পরিবারে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে রয়েছে নানা অন্তরায়। এ সব পরিবারে সমস্যাও থাকে অনেক বেশি। কিছু পরিবার সচেতন হলেও তাদের পারিবারিক অশান্তির কারণে শিশুরা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়।
 এতে শিশুর জীবন হয়ে পড়ে মানসিক প্রতিবন্ধী। এছাড়া অসচেতন পিতামাতার দ্বারা নানানভাবে নির্যাতিত হয়ে থাকে। যে বয়সে তাদের শাসন করা চলে না, বয়সে তাদের শাসন করা হয়। এতে শিশুদের মানসিক বিকাশ বিঘাত হয়।
 উচ্চবিত্ত পরিবারে শিশুরা প্রচুর প্রভাব প্রতিপত্তির মাঝে থেকেও নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এসব পরিবারের শিশুরা পিতামাতার মধ্যে সুসম্পর্কের অভাব ও অনৈক্যর কারণে শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে না। এর ফলে উচ্চবিত্ত পরিবারের অনেক শিশু জড়িয়ে পড়ে অপরাধমূলক কাজের সাথে। তারা এক সময় বড় বড় অপরাধের সাথে মিশে যায়।

শিশু মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ঢাকা বিভাগে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় শতকরা ১৮.৪% শিশু মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। এছাড়াও শিশুদের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, মৃগী রোগ ও মাদকাশক্তির শতকরা হার যথাক্রমে ৩, , ২.০ ও ০.৮ ভাগ। মনোবিজ্ঞানীদের মতে বাসগৃহ এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য অনুকূল হওয়া প্রয়োজন।
 বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত হলো, শিক্ষকবৃন্দও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন বিকাশে সচেষ্ট হলেন, অথচ বাসগৃহে মা-বাবা এ ব্যাপারে সচেতন হলেন না, তাহলে শিশুর সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটবে না। শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া কোনোভাবেই শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব নয়। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে মা-বাবার আচরণবিধি যা শিশুর ব্যক্তিত্বে প্রতিফলন ঘটায় তাহলো, প্রত্যাখ্যান, আগ্রাসন, অসহায়বোধ, ভীতি অতিসংরক্ষণ শিশুসুলভ আচরণ, বশ্যতা, অসহায়বোধ ও অসঙ্গিতপূর্ণ আচরণ, ঈর্ষা ও অপরাধ প্রবণতা।
 আর যেসব পরিবারে মা-বাবা শিশুদের সঙ্গ দেন, আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করেন, এসব শিশুরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে অন্যদের সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। শিশুর প্রতি মা-বাবা আচরণের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকদের আচরণ বিধি ভালো নাহলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিঘিœত হয়। শিশুর বাসগৃহ ও বিদ্যালয়ের পরিবেশ যাতে মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সহায়ক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
 শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য গড়ে তোলার জন্য যা যা প্রয়োজন তাহলো
১. শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ গড়ে তোলা। ২. শিশুর বিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত করে গড়ে তোলা।
 ৩. শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পারিবারিক অশান্তি ও বিশৃংখলা দূর করা, সহিংসতা, দরিদ্রতা, শিশুর নিরাপত্তাহনিতা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
 ৪. যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতি শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর চাপ পড়ে।

এজন্য এসব সমস্যা কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে হবে। উল্লেখ্য যে, আমরা শারীরিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যতটুকু সচেতন, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি ততটুকু সচেতন নই। মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী না হলে একজন মানুষ সার্বিকভাবে সুস্থ হতে পারে না, শিশুদের ক্ষেত্রে একথা আরও প্রযোজ্য।
 মনোবিজ্ঞানী ও লেখক ড. মোহিত কামাল বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্যের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অংশ হলো শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য। শিশু জন্মের সময় অসাবধানতা, অপুষ্টি, শৈশবের নানা রোগের সংক্রমণ মাথায় আঘাত, জন্মগত নানা ত্রটি এবং শিশুর প্রতি পরিবারের সদস্যদের যথোপযুক্ত আচরণ না করার কারণে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকে। আবার শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চলে নানা বিভ্রান্তির পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা।
 সাধারণ অসহায় মানুষের আবেগকে পুঁজি করে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যকে স্বাস্থ্য সেবা খাত থেকে আলাদা রাখার অংশ হিসেবে শিশুর বিভিন্ন মানসিক সমস্যাকে দেখানো হয় যে সেটা কোনো রোগ নয়।
 এভাবে প্রকৃত চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি নানাভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এই অবস্থা দূর করার জন্য প্রয়োজন জন সচেতনতা এবং সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ। কেবলমাত্র প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যায় মানসিক স্বাস্থ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে সেটি অর্জন করা সম্ভব।
 শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য মানসিক চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, সাইক্রিয়াটিস্ট, এনজিও এবং সচেতন জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আসতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন