Powered By Blogger

বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০১৫

আবার ভূমিকম্প




 
সস্প্রতি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত নেপালের ভাকটাপুরের একটি বৌদ্ধ মন্দির। একটি জাতিসংঘের ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্য: ছবিটি তুলেছেন;উমার হাভানা   
আমাদের পরিবেশ ডেস্ক: গত ১২ মে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ কয়েক দফা কেঁপে উঠে। এই ভূ-কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিলো  চীন ও নেপাল। যার প্রভাবে গত ১২ মে দুপুর ১টা ৫ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ। ভূমিকম্পের পর আরও কয়েক দফা কম্পন অনুভূত হয়। এতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এক ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির উদ্ধারকাজ শেষ না হতেই আবারও শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানলো নেপালে। গত ১২ মে মঙ্গলবার ওই ভূমিকম্পে দেশটিতে অন্তত ৬৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শত শত মানুষ। একই ভূমিকম্পে ভারতে ১৭ জন নিহত হয়েছে। তিব্বতে নিহত হয়েছে একজন।
ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। এ সময় আতঙ্কিত লোকজন বাড়ি ও অফিস ভবন থেকে রাস্তায় নেমে আসেন। ফোনে খোঁজখবর নিতে থাকেন স্বজনদের। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় নুরুন নাহার (৬২) নামের এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। ভূমিকম্পের সময় তিনি গোসল করতে ঢুকেছিলেন। আতঙ্কে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। পরিবারের লোকজন তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে আবহাওয়াবিদ মোমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বার্তায় জানানো হয়, আগারগাঁও ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে ৬১১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নেপালে ছিল ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল। বেলা ১টা ৫ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে শুরু হওয়া ওই ভূমিকম্পের তীব্রতা কেন্দ্রস্থলে ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এর তথ্যমতে, উৎপত্তিস্থলে রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৪। উৎপত্তিস্থল ছিল চীনের দক্ষিণ-পূর্বে ঝাম এলাকা। নেপালে এর তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ১। মূলত ইউরেশিয়া ও ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক প্লেটের সংযোগস্থলে ভূমিকম্পটি হয়। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইএমএসসি জানায়, নেপালের কাঠমাণ্ডু থেকে ৮২ কিলোমিটার ও কোদারি থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে ভূগর্ভের মাত্র দুই কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটি বেলা একটা ১০ মিনিটে আঘাত হানে। গত ২৫ এপ্রিল নেপালে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৯। ওই ভূমিকম্পে আট হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। আহত হয় ১৭ হাজার মানুষ। ওই ভূমিকম্পে ভারতেও প্রাণহানি ঘটে।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, দূরত্বের কারণে বাংলাদেশে গত ১২ মে রিখটার স্কেলে ৪ থেকে ৫ তীব্রতার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় প্রবলভাবে অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এছাড়া বেশ কয়েক জেলায় ভবনে ফাটল ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ার খবর জানিয়েছেন প্রতিনিধিরা। এদিকে ভূমিকম্পের সময় রাজধানীর বহুতল ভবনে অবস্থান করা মানুষ আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসেন। প্রথম দফা আঘাত হানার পর দ্বিতীয়বার কম্পন অনুভূত হওয়ায় আতঙ্কিত মানুষ দীর্ঘ সময় রাস্তায়ই অবস্থান করেন।
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, তেঁতুলিয়ায় ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে নূরুননাহার (৬৫) নামের এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। তিনি উপজেলা সদরের খুনিয়াপাড়া গ্রামের কফিল উদ্দিনের স্ত্রী। এদিকে গত মঙ্গলবার দুই দফা ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সর্বস্তরের মানুষ। প্রথমবার দুপুর ১টা ৫ মিনিটে ৪০-৪৫ সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্পের পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়। জেলার অন্য কোথাও বড় ধরনের ক্ষতির কোন খবর পাওয়া যায়নি।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীতে এক মিনিট স্থায়ী ভূকম্পনে জনমনে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। বিভিন্ন দালানকোঠা থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। এর প্রায় ৩০ মিনিট পর ১টা ৩৮ মিনিটে আবার কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী মৃদু ভূকম্পনে কেঁপে ওঠে গোটা জেলা। অপর দিকে ভূমিকম্পের পরপরই প্রচণ্ড ঝড় আঘাত করে জেলা সদর ও উপজেলা সদর সৈয়দপুরে। ঝড়ে অর্ধশত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়া ছাড়াও অনেক জমির পাকা ধান বিনষ্ট হয়ে গেছে।
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জে জগন্নাথপুরে জনতা ব্যাংকের  শাখা সহকারী ম্যানেজার  সাকলাইন আহমদ দায়িত্ব পালনকালে ভূমিকম্পে  আহত হন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ভূকম্পন চলাকালে অফিস আদালত বাসাবাড়ির লোকজন ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসেন।
হবিগঞ্জ থেকে জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৭ মিনিটে হবিগঞ্জে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পরপরই আতঙ্কিত লোকজন বাসাবাড়ি ছেড়ে সড়কে নেমে আসেন। ভূমিকম্পের ফলে পুকুর, জলাশয়ে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোথাও হতাহতের খবর জানা যায়নি।

কাউনিয়া (রংপুর) থেকে গোলাম আযম জানান, পর পর দুবার ভূমিকম্পে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নিজদর্পা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরগনাই কয়েকটি বিদ্যালয়ে ফাটল দেখা দেয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। উপজেলার নিজদর্পা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, গত মাসে দুদিন এবং গত ১২ মে মঙ্গলবারের ভূমিকম্পের কারণে বিদ্যালয়ের ৬ ফিট প্রস্থ একটি অফিস কক্ষসহ ৩টি শ্রেণীকক্ষের পিলার ও লিংটনে বড় বড় ফাটলসহ ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়েছে। চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের চিলমারীও জোরালো ভূমিকম্পে দুই-দুবার কেঁপে উঠলো। আবারও এই ভূমিকম্পের ফলে ইউএনও অফিস, থানাহাট এইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। আর ওই সময় আতঙ্কে লোকজন ঘরবাড়ি, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস, দোকানিরা দোকান ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। দিনাজপুর থেকে জানান, দিনাজপুরে ভূমিকম্পের আগে হঠাৎ শুরু হওয়া ঝড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জনমনে। কালবৈশাখী ঝড় শুরু ৩ মিনিট পর ভূমিকম্পন হয়। ২০ মিনিটের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা আরও একটি ভূমিকম্প হয়। এতে আরও আতঙ্ক ও ভয় ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন