![]() |
নদী ভরাট করে চলছে প্লট নির্মান |
আামদের পরিবেশ ডেস্ক:নদীর প্রতি এই বিরূপ আচারণ এখনই বন্ধ না করলে কালের গহ্বরে হারিয়ে যাবে অধিকাংশ নদী। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার নদীপথ হারিয়ে গেছে। নদীর বহুমুখী সংকট থেকে উত্তরণ তাই আমাদের জন্যও জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু রাজধানী ঢাকা বা আশপাশে নয়। সারাদেশেই চলছে নদী,খাল, বিলসহ প্রাকৃতিক জলাধার দখল।
ধান নদী খাল—এই তিনে বরিশাল’ —একসময় বরিশালকে চেনাতে ব্যবহূত হতো এমন প্রবচন। কিন্তু সেই চিত্র বদলে গেছে। শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া খালগুলোর বেশির ভাগই অস্তিত্ব হারিয়েছে। কীর্তনখোলা নদীও দখল হচ্ছে।
বরিশাল শহরে একসময় ১৮টি বড় খাল ছিল। বরিশালের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯০৬ সালের ১৫ এপ্রিল ভাটার খালে ভিড়েছিল কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বজরা। বজরায় অবস্থান করা বিশ্বকবিকে মুগ্ধ করেছিল বরিশালের রূপ। খাল-বিল-পুকুর-নদী পরিবেষ্টিত বরিশালের রূপে মুগ্ধ কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই নগরকে ‘বাংলার ভেনিস’ আখ্যায়িত করেছিলেন।
বরিশালের খালগুলোর অন্যতম বটতলা খাল। শহরের বটতলা থেকে নবগ্রাম হয়ে ঝালকাঠি জেলার রায়পাশা-কড়াপুরে গিয়ে খালটি সুগন্ধা নদীতে মিশেছে। এলাকাবাসী জানান, আশির দশকের মাঝামাঝি সময়েও খালটিতে নৌকা
চলত। কিন্তু বেশির ভাগ অংশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এটি মরা খাল। নবগ্রাম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি স্থানে খালটির ওপর নির্মিত সরু কালভার্টের দুই পাশের বিরাট অংশ ভরাট হয়ে গেছে। পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খালে থাকা ময়লা-আবর্জনা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
নগরবাসী
জানান, বরিশাল সিটি
করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আহসান
হাবিব বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালে উন্নয়নের নামে খাল ভরাট শুরু হয়। সে সময় (১৯৯৮ সাল) তৎকালীন
পৌরসভা বটতলা এলাকায় বটতলা খাল ভরাট করে
দোকানপাট নির্মাণ করে। ২০০০ সালে বরিশাল পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে আহসান হাবিব কিছুদিন মেয়র ছিলেন।
ওই সময় খালটির বটতলা থেকে হাতেম
আলী
কলেজ চৌমাথা পর্যন্ত অংশ ভরাট করা হয়। ২০০৩ সালে মজিবর রহমান সরোয়ার (বর্তমানে বরিশাল সদরের সাংসদ) মেয়র
নির্বাচিত হওয়ার পর খালের নবগ্রাম
থেকে
বটতলা মার্কেট পর্যন্ত এলাকা ভরাট করা হয়। বটতলা খালের ওপর সড়ক নির্মাণ করা হয় সদ্য সাবেক মেয়র শওকত
হোসেন মেয়র থাকাকালে।
জানতে চাইলে সাবেক ও বর্তমান এই তিন মেয়রই
বটতলা খাল ভরাটের জন্য পরস্পরকে
দায়ী
করেন। আহসান হাবিব বলেন, বটতলা
খাল এলাকায় নির্মিত দোকানপাটগুলো ছিল জেলা
পরিষদের। এবার তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকারের অন্যতম ছিল খাল পুনরুদ্ধার ও খনন করা। তিনি তা করবেন।
মজিবর রহমানের দাবি, তাঁর সময় বটতলা খাল ভরাট করা হয়নি, খালের পাড়ের ভরাট হওয়া অংশ ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর শওকত হোসেন বলেন, তিনি যখন রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেন, তখন ওই এলাকায় খাল ছিল না। এর পরও তিনি রাস্তার নিচ দিয়ে পানি চলাচলের জন্য নালা নির্মাণ করেছেন।
বরিশালের নদী খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, কাগজে-কলমে এখনো শহরে ১৮টি খালের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় সাতটির। এগুলো হলো জেল খাল, লাকুটিয়া খাল, আমানতগঞ্জ খাল, সাগরদী খাল, নবগ্রাম খাল, পুডিয়া খাল ও টিয়াখালী খাল। খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
বরিশালের আওয়ামী লীগের নেতা তরুণ চন্দ কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতিবিজড়িত লাকুটিয়া খালের বিপন্ন অবস্থা দেখে আসার পরামর্শ দেন। অক্টোবরের শুরুতে সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের মড়কখোলা পুল থেকে মুখার্জির পুল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত লাকুটিয়া খাল মরণাপন্ন। খালের দুই পাড়েই দখলদারদের দৌরাত্ম্য। একই চিত্র জেল খাল, সাগরদী খাল ও আমানতগঞ্জ খালের। এসব খালের পাড় তো দখল হয়েছেই, কোথাও কোথাও দখলদারেরা ঢুকে পড়েছেন খালের ভেতরেও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে ভাটার খাল, চানমারী খাল, নাপিতখালীর খাল ও শোভারানীর খাল ভরাট করা হয়েছে।
মজিবর রহমানের দাবি, তাঁর সময় বটতলা খাল ভরাট করা হয়নি, খালের পাড়ের ভরাট হওয়া অংশ ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর শওকত হোসেন বলেন, তিনি যখন রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেন, তখন ওই এলাকায় খাল ছিল না। এর পরও তিনি রাস্তার নিচ দিয়ে পানি চলাচলের জন্য নালা নির্মাণ করেছেন।
বরিশালের নদী খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, কাগজে-কলমে এখনো শহরে ১৮টি খালের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় সাতটির। এগুলো হলো জেল খাল, লাকুটিয়া খাল, আমানতগঞ্জ খাল, সাগরদী খাল, নবগ্রাম খাল, পুডিয়া খাল ও টিয়াখালী খাল। খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
বরিশালের আওয়ামী লীগের নেতা তরুণ চন্দ কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতিবিজড়িত লাকুটিয়া খালের বিপন্ন অবস্থা দেখে আসার পরামর্শ দেন। অক্টোবরের শুরুতে সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের মড়কখোলা পুল থেকে মুখার্জির পুল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত লাকুটিয়া খাল মরণাপন্ন। খালের দুই পাড়েই দখলদারদের দৌরাত্ম্য। একই চিত্র জেল খাল, সাগরদী খাল ও আমানতগঞ্জ খালের। এসব খালের পাড় তো দখল হয়েছেই, কোথাও কোথাও দখলদারেরা ঢুকে পড়েছেন খালের ভেতরেও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে ভাটার খাল, চানমারী খাল, নাপিতখালীর খাল ও শোভারানীর খাল ভরাট করা হয়েছে।
খালগুলোকে
দখলদারমুক্ত করার আন্দোলনের ফলে ২০০৯ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে যৌথ জরিপকারীদের
অনুসন্ধানে কীর্তনখোলা নদী থেকে
নথুল্লাবাদ
ব্রিজ হয়ে কুদঘাটা পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত জেল খালের দুই কিলোমিটার এলাকায় ৮২ জন
দখলদার চিহ্নিত করা হয়। সে সময়
নদী
খাল বাঁচাও আন্দোলনের মধ্যস্থতায় বরিশাল সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ
(বিআইডব্লিউটিএ) এবং বরিশাল
সেচ প্রকল্প (বিআইপি) মিলিতভাবে নগরের খালের সীমানা নির্ধারণের জন্য জরিপ ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের কাজ শুরু
করেছিল। উদ্যোগটি সেখানেই থেমে আছে
বলে
জানালেন কাজী এনায়েত হোসেন।
দখল হচ্ছে নদী: বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ
কবির জানান, ২০০৭ সালে শুধু
বরিশাল নদীবন্দর
এলাকায় জরিপ করে কীর্তনখোলা নদীতে ৩৭ জন দখলদারকে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ অভিযানও চালানো হয়েছিল। পরে
নদীতীরের দখল হওয়া জায়গার একাংশে
মুক্তিযোদ্ধা
পার্ক নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন। অন্য অংশ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণেই রয়ে গেছে।
সরেজমিনে
শহরের লঞ্চঘাটের বিপরীতে কীর্তনখোলায় জেগে ওঠা রসুলপুর চরকে কেন্দ্র করে নদী ভরাট ও
দখলের ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। সদর
উপজেলা
ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৮০-এর
দশকের দিকে জেগে ওঠা ওই চরের আয়তন
২৫ একর ২৩ শতাংশ। শুরুতে গৃহহীন কিছু মানুষ ওই চরে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে যখন
যে দল ক্ষমতায় এসেছে, সেই
দলের সমর্থনপুষ্ট
ভূমিদস্যুরা চর দখল করে নদী ভরাট করে চরের আয়তন বাড়িয়েছেন।
রসুলপুর
চরের জমি দখল ও নদী ভরাট নিয়ে গত বছরের ২ মার্চ প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ৬
মার্চ হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ
এ বিষয়ে রিট আবেদন করলে হাইকোর্ট ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নদী দখল করে মাটি ভরাট ও প্লট বরাদ্দ বন্ধের নির্দেশ
দেন। আদালত সিএস ও আরএস রেকর্ড অনুযায়ী
নদীর সীমানা নির্ধারণে জেলা প্রশাসনকে কমিটির মাধ্যমে জরিপ করে তিন মাসের মধ্যে তা আদালতে দাখিল করারও
নির্দেশ দেন। তবে এখনো এ ব্যাপারে
কার্যকর
কিছু হয়নি।
জানতে
চাইলে বরিশালের জেলা প্রশাসক শহীদুল আলম এ বিষয়ে বলেন, ‘তখন
আমি এখানে ছিলাম না। তাই বিষয়টি আমার অজানা। বিষয়টি জেনে জানাব।’
অক্টোবরের
শুরুতে সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের
দপদপিয়ায় নদীতীরের
খাসজমি দখল করে বালু ভরাট করা হচ্ছে। রূপাতলীতে অপসোনিনের সীমানাপ্রাচীরে আটকা পড়েছে কীর্তনখোলা
তীরের প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা।
অপসোনিনের প্রকল্প কর্মকর্তা রফিকুর রহমান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের
কারখানায় নির্মাণকাজ চলছে বলে আপাতত লোক চলাচল বন্ধ রাখার জন্য এ প্রাচীর দেওয়া হয়েছে।
নির্মাণকাজ শেষ হলে নদীর জায়গা থেকে সীমানাপ্রাচীর
সরিয়ে নেওয়া হবে।
পটুয়াখালী সদর
উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের পাশ ঘেঁষে বয়ে গেছে ধরান্দি নদী। এক সময়ে এই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে
উঠেছিল এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের
কেন্দ্রবিন্দু ধরান্দি বাজার। এ নদীপথেই গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য আনা নেয়া করতো নৌযানে।
তবে এসব কথা এখন কেবলই স্মৃতি। নদীর
দুই তীর দখলের উৎসবে অনেক আগেই যৌবন হারিয়েছে। আর তার গতিপথ ধংস করতে নদীর মূল ধারায় সংযোগ খালে
অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে স্লুইচ গেট। আর সে কারণেই এটাকে আর নদী না বলে খাল
বলাই ভালো।
ধরান্দী
বাজারের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,
১৯৯২-১৯৯৩
সালে প্রায় ১০০ ফিট
প্রশস্তের এ ধরান্দী নদীর মুখে ২০ ফিট প্রশস্ত খালে তিন কপাটের স্লুইচ গেট নির্মাণ করা হয়েছে। এ
কারণে আস্তে আস্তে নদীর স্রোত কমে
যায়।
আর জলাবদ্ধতার কারণে মূল নদীটি পরিণত হয় বন্ধ জলাশয়ে। পানির প্রবাহ না থাকায় এখন রীতিমতো এ এলাকার কয়েকশ কৃষক
যেমন শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটে কৃষিকাজ
করতে পারছেন না। তেমনি এ নদীতে যারা এক সময়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো তারাও এখন আর মাছ ধরতে
পারছে না।শুধু ধরান্দী খালে স্লইচগেট নির্মাণই নয়। প্রতিটি বড়ো বড়ো খালেই এখন নির্মাণ করা হচ্ছে স্লইচগেট। আর এক্ষেত্রে সরকারের কোনো বিভাগের সঙ্গে কোনো বিভাগের যেন সমন্বয় নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড যেমন স্লুইচগেট নির্মাণ করছেন, তেমনি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) বিএডিসি ও করছেন এসব উন্নয়ন কাজ, এছাড়া বিভিন্ন এনজিও এসব উন্নয়ন কাজ সম্পাদক করছেন। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন নদী ও খালে কী পরিমাণ বাঁধ দেয়া হয়েছে এবং কী পরিমাণ স্লইচগেট নির্মাণ করা হয়েছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই সরকারের।
এদিকে, দিনদিন প্রাকৃতিক জলাধার হারিয়ে যাওয়ায় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এশিয়া মহাদেশের প্রথম পানি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এ জাদুঘর উদ্বোধন করতে এসে নদী ও প্রাকৃতিক জলাধার নিয়ে কাজ করা বিশিষ্টজনরা বলছেন, জলাধার রক্ষায় এখনই কার্যকর পরিকল্পনা নিতে হবে তাছাড়া কয়েক দশক পর নদী ও প্রকৃতিক জলাধার আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন