হারুন ইবনে শাহাদাত
বাংলাদেশ গানের দেশ। এদেশের মানুষ ও প্রকৃতি
সবার মাঝে লুকিয়ে আছে সুরের লহরী। জমি চাষের সময় ধান -পাট কাটা. ক্ষেত নিড়ানির সময়
কৃষকের কণ্ঠের গানে উদাস হয়ে বয়ে যায় বাতাস। নৌকা বাইবার সময় মাঝির ভাটিয়ালী সুর
নদীর পানির ছলাৎ ছলাৎ সুরের সাথে মিশে যে ছন্দ দোলা তোলে তার তুলনা আর কোথাও মিলে
না। এই জন্যই হয় তো বলা হয়, প্রাণের দেশ, ধানের দেশ গানের
দেশ বাংলাদেশ। এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি মনের
অজান্তে কোনদিন গান গেয়ে উঠেননি। তারপরও ধর্ম বিশ্বাসের কারণে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট
মানুষ মনে করেন, গান-বাজনা হারাম।
কোরআন-হাদীসের কোথাও এমন কথা লেখা না থাকলেও
এমন স্ববিরোধী বিশ্বাস নিয়ে আমৃত্যু বসবাস করেন ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী অধিকাংশ
মানুষ। এমন দ্বন্দ্বের কারণে তাদের মনের মাঝে পাপবোধের বসবাস মানসিক সুসষম বিকাশকে
বাধাগ্রস্ত করে। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনের এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানোর
ক্ষুদ্র প্রয়াস এই নিবন্ধ।
![]() |
বাংলা ভাষায় প্রথম গজল ও ইসলামের গানের স্রষ্টা জাতীয কবি কাজী নজরুল ইসলাম |
ভাল বা ইতিবাচক উদ্দেশ্যে তৈরি জিনিসও কতটা
ভয়াবহ হতে পারে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ এ্যাটমিক শক্তি। অনুরূপভাবে একটি ছুড়ি একজন
ডাক্তার ব্যবহার করেন জীবন রক্ষার জন্য, অপরদিকে একজন
খুনী ও ডাকাত ব্যবহার করে জীবন হরণ করার কাজে। সঙ্গীত বা গান-বাজনার ইতি কিংবা
নেতিবাচক দিকও নির্ভর করে গীতিকার ও গায়কের ওপর। গান যেমন মানসিক বিকাশে ইতিবাচক
ভূমিকা রাখতে পারে, আবার উল্টো দিকে যৌন উন্মাদনা ও কুভাব সৃষ্টি
করে সমাজে বিশৃঙ্খলাও ডেকে আনতে পারে। একজন ডাকাত ছুড়ি দিয়ে মানুষ খুন করছে এই
যুক্তি দিয়ে যেমন ডাক্তারের হাত থেকে ছুড়ি কেড়ে নেয়া ঠিক নয়, অনুরূপভাবে
চিত্ত বিনোদন ও মানসিক বিকাশের সহায়ক নির্মল সঙ্গীতও নিষিদ্ধ হতে পারে না। ইসলামী
আইনশাস্ত্র বা ফিকাহর মূলীতি হলো, ‘যা অবৈধ ঘোষণা করা হয়নি, তাই
বৈধ।’ সঙ্গীত অবৈধ পবিত্র কোরআনে এমন কোন আয়াত নেই। তারপরও কেউ কেউ কয়েকটি
আয়াতের ব্যাখ্যায় সাহাবী ইবনে আব্বাস রা. এবং সাহাবী ইবনে মাসউদ রা. এর উদ্ধৃতি
দিয়ে গানকে অবৈধ বলা হয়। কিন্তু মদ,সুদ
এবং জুয়া নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আল কোরআনে যেভাবে সুষ্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে,
গিনা,নাগমা,সামা, গান
বা সঙ্গীতকে সেভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি।
যারা সঙ্গীতকে হারাম মনে করেন, তারা
তাদের যুক্তির পক্ষে সূরা আল: লুকমানের ৬ নম্বর আয়াতের ‘লাহ্ওয়াল হাদীস’
যার অর্থ অনর্থক বা অপ্রয়োজনীয় গল্প-গুজব বা বাক্য। সুরা নাজমের ৬১
নম্বর আয়াতের ‘সামেদুন’ বা উদাসীন। সুরা
হুজরাতের ৪৯নং আয়াতে ‘সাউত’ বা গর্দভের স্বর
। উল্লেখিত এমন নানান প্রতিশব্দ ব্যবহার করে যারা সঙ্গীত বা গানকে নিষিদ্ধ বলে
প্রচার করে, তাদের অবগতির জন্য বলা প্রয়োজন- সঙ্গীতের আরবি
প্রতি শব্দ গিনা,নাগমা,সামা ব্যবহৃত
হয়নি।