Powered By Blogger

শুক্রবার, ২ মার্চ, ২০১৮

বাস্তিল দুর্গেরও পতন হয়েছে


 লেখক হারুন ইবনে শাহাদাত


॥ হারুন ইবনে শাহাদাত॥
ফ্রান্সের সম্রাট চতুর্দশ লুই বলেছিলেন, ‘আমিই রাষ্ট্র।’ এই কথার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেন,  আমিই রাষ্ট্র দর্শনের মূল কথা হলোÑ আমার কথা ও বক্তৃতা বিবৃতি হলো সংবিধান। আমার কাজ হলো গণতন্ত্র। আমার ধমক হলো আইনের শাসন। সম্রাট, রাজা-বাদশাদের শাসন এখন আর কোনো সুসভ্য দেশে নেই। কিন্তু তাদের অনুসৃত নীতি থেকে মুক্ত নন কোনো স্বৈরাচারী শাসক। নানান রূপে তারা বার বার ফিরে আসেন এবং জনগণের কাছ থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা কেড়ে নিয়ে নিজেরাই মালিক হয়ে বসেন। জনগণের কণ্ঠ স্তব্ধ করতে সরকারি টাকা মানে জনগণের অর্থে লালিত-পালিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে ব্যবহার করেন। সরকার পরিবর্তনের বৈধ প্রক্রিয়ায় অন্যের


শিল্পীর চোখে ফারসি বিপ্লবের সময় বাস্তিল দুর্গের পতন
অংশগ্রহণ তারা সহ্য করতে চান না। তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেই ক্ষান্ত হন না, জনগণের প্রতিনিধি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, শক্র মনে করেন তারা। সংঘবদ্ধ জনগণকে তারা ভয় পান। তাই বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক তৎপরতার মধ্যে সবসময় তারা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি জনসমর্থন নিয়ে সরকার পরিবর্তনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবেÑ এটাই স্বাভাবিক। এ কথা কারো অজানা নয়, রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্যই হলো ক্ষমতায় যাওয়া। এই লক্ষ্যে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ, বৈঠক, মিছিল, মিটিং কোনো অবৈধ ষড়যন্ত্র নয়। বিরোধী দলের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ নিশ্চিত হলে সরকার ক্ষমতা হারাবেÑ এটাই স্বাভাবিক। এই প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়াই গণতান্ত্রিক উদারতা বলে মনে করেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা এমন এক চোরাগলিতে আটকে গেছে, যেখানে এই উদারতার মৃত্যু ঘটেছে। এই প্রক্রিয়াকে আর যাই বলা হোক, গণতন্ত্র বলা যায় না বলে মনে করেন দেশের রাজনীতি বিশ্লেষকরা। এই অবস্থার উত্তরণে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্রের নামে একদলীয় শাসন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তারা সরকারি টাকায় ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করেছেন। কিন্তু বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা তাদের অফিসের তালা খুলে বসার সুযোগ পর্যন্ত পাচ্ছেন না। নাশকতা মামলার মোড়কে রাজনৈতিক মামলা দিয়ে নানান ছলছুতায় তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিশেষ করে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতির মাঠ ও জাতীয় নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সরকার এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগ একের পর এক নীলনকশা আঁকছে। কিন্তু তারপরও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নীরব। প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীন মর্যাদা হারিয়ে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে কাজ করছে।