গৌতম
লাহিড়ী, নয়াদিলি্ল
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরের আগে
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ভারত ও
বাংলাদেশের মধ্যে সমপরিমাণ পানিপ্রবাহ নিয়ে ২০১১ সালে দু'দেশের মধ্যে তিস্তার
পানি বণ্টনে যে সমঝোতা হয়েছিল,
বাংলাদেশ সরকার সে অনুযায়ীই চুক্তিটি সই
করতে চায়। তবে এ চুক্তি সংশোধনের দাবি তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
কিন্তু ভারতের এই চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে
বাংলাদেশ।প্রধানমন্ত্রী মোদির
ঢাকা সফরের আগে গতকাল বৃহস্পতিবার
দিলি্লতে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল
সেন্টারে আয়োজিত কূটনৈতিক রিপোর্টারদের
বৈঠক হয়। সেখানে ভারতে নিযুক্ত
বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোজাম্মেল আলী এক
প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'তিস্তা নদীর
পানি বণ্টন নিয়ে যে চুক্তির রূপরেখা আগে
তৈরি হয়েছে, সেটাই চূড়ান্ত। এর
কোনো সংশোধন বাংলাদেশ চায় না। ভারতের
সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে
রূপরেখা বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছেন
তার কোনো পরিবর্তন হবে না।'
তবে
দিলি্লতে কেন্দ্রীয় সরকার এই চুক্তি
পরিবর্তনের কোনো প্রস্তাব সম্পর্কে এখনও
স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওই
চুক্তিতে শুষ্ক মৌসুমে ভারত ও
বাংলাদেশের মধ্যে সমপরিমাণ পানিপ্রবাহ
নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ভারতের সাবেক
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে চুক্তি সই
করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায় চুক্তির রূপরেখা মানেননি। এখনও মানছেন না।
তিস্তায় ২০ শতাংশ পানিপ্রবাহ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট পানির ৫০-৫০ হিস্যা মানতে রাজি নন মমতা।
তবে
বাংলাদেশের হাইকমিশনার আশা প্রকাশ
করেন,
প্রধানমন্ত্রী মোদি যেভাবে
রাষ্ট্রনেতাসুলভ আচরণ দেখিয়ে সীমান্ত
বিলের সমাধান করেছেন, একইভাবে
তিস্তা পানি চুক্তিরও সমাধান করবেন।
হাইকমিশনার মোজাম্মেল আলী বলেন, 'আমরা
এখনও আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী মোদি
ঢাকা সফরে গিয়ে এ বিষয়ে ইতিবাচক কথা
বলবেন।'তিনি আরও বলেন,
'এখনও প্রধানমন্ত্রী মোদির
ঢাকা সফরের দিন স্থির হয়নি। সফরের ১০ দিন আগে তা ঘোষণা হবে। এ সফর হবে দেড়
দিনের। বাংলাদেশের হাইকমিশনারের ধারণা,
প্রধানমন্ত্রী মোদি ৫ থেকে ৭ জুন
ঢাকা সফর করবেন। কিন্তু গতকাল দিলি্লর হিন্দু পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী এ
সফর পিছিয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
গতকাল বাংলাদেশের হাইকমিশনার ভারতীয় কূটনৈতিক রিপোর্টারদের কাছে
প্রধানমন্ত্রী মোদির আসন্ন সফর ও বাংলাদেশের প্রত্যাশা নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
তিনি তার প্রাথমিক বক্তব্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যাবতীয় বিষয় উল্লেখ
করলেও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পর্কে কোনো বক্তব্য পেশ করেননি। এ
প্রসঙ্গে ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি
শুনেছি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
বলেছে,
তারা উপরিভাগের সিকিম রাজ্য থেকে
তিস্তার যথেষ্ট পানিপ্রবাহ পাচ্ছে
না। তাই এ বিষয়ে তার সুনির্দিষ্ট দাবি
আছে। এ নিয়ে দিলি্ল বা কেন্দ্রীয়
সরকার পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম রাজ্য সরকারের
সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। সব পক্ষ
সর্বসম্মত হলেই কেবল তিস্তা চুক্তি সই
হবে।' হাইকমিশনার বলেন,
'যদিও এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ
বিষয়, আমরা পৃথকভাবে পশ্চিমবঙ্গ বা সিকিম সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি না।'
হাইকমিশনার
জানান, প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের সময় ভারত-বাংলাদেশের
মধ্যে নতুন রেল যোগাযোগ এবং বাস চলাচল নিয়ে আলোচনার অগ্রগতি হবে। বিশেষ
করে ১৯৪৭ সালের আগে ভারতের সাতটি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশ আসা যেত। এখন সে পথ
বন্ধ। এর মধ্যে তিনটি পয়েন্ট চালু হয়েছে। আরও পয়েন্ট হতে পারে কলকাতা
থেকে। তেমনি সিলেট থেকে আসাম হয়ে বাংলাদেশ রেললাইন হতে পারে। এ ছাড়া
উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি,
ভারতীয় লগি্ন, ভিসা প্রথা সরলীকরণসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে সমঝোতা হতে পারে।
বাংলাদেশ ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল-ভুটানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আরও
বৃহত্তর ক্ষেত্রে যোগাযোগ গড়তে চায়। প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরকালে এসব
বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হতে পারে। আলাপকালে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার
সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরী ও প্রেস মিনিস্টার এনামুল হক চৌধুরী উপস্থিত
ছিলেন।সমকাল
good
উত্তরমুছুন